শীর্ষ খবর
ভয়ঙ্কর সিরিয়াল রেপিস্ট স্কুল শিক্ষক আরিফ : রেহাই পায়নি ছাত্রীর মা’ও
আরিফুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জের একটি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক। ২০০৯ সালে চাকরি শুরু করে সে। পড়াতো অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়। তার বাড়ি মাদারীপুর জেলার শ্রীনদী গ্রামে। পিতার নাম মৃত সিরাজুল ইসলাম। রাজধানী ঢাকার কবি নজরুল কলেজ থেকে বিবিএস এবং গুলশান মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করেছে সে।
নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের স্কুল শিক্ষক এই আরিফ যেনো সিরিয়াল রেপিস্ট। তার লালসার শিকার হতে হয়েছে যে কতো ছাত্রীকে তা খুঁজে খুঁজে বের করতে হচ্ছে। এমনকি আরিফের হাত থেকে রেহাই পায়নি ছাত্রীর মা’ও। মেয়েকে ধর্ষণ করে সেই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মা’কেও ধর্ষণ করে সে। এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রীকে সে ধর্ষণ করেছে বলে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে র্যাব।
জানা যায়, পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের টার্গেট করে ওই শিক্ষক প্রথমে দুয়েকটি ঘটনা ঘটায়, কিন্তু কেউ মুখ না খোলায় আরও বেপরোয়া হয় সে। এরপর একের পর এক ছাত্রীকে টার্গেট করে এই শিক্ষক।
কারও সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে, কাউকে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দেওয়ার কথা বলে, কোনও ছাত্রীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিয়ে, আবার কোনও ফেল করা শিক্ষার্থীকে ডেকে ভালো নম্বর পাইয়ে দিতে চেয়ে ফাঁদে ফেলতো এই শিক্ষক। অঙ্ক ও ইংরেজির শিক্ষক হওয়ার সে এসব সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন জানান, শিক্ষক আরিফুল ইসলামের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এমন প্রায় ৭ থেকে ৮ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। এছাড়া তার মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের ডিভাইস চেক করে মোট ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার প্রমাণ মিলেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষক আরিফুলের ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এমন শিক্ষার্থী পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আছে। এমনকি এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর তার ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে তার মাকেও ওই শিক্ষক ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।’ এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন আরও জানান, সিরিয়াল রেপিস্ট শিক্ষক আরিফুল ইসলাম র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। স্কুল থেকে পাঁচশ’ গজ দূরে একটি ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে শুধু ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতো সে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত ওই স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরের কয়েকজন ছাত্রীকেও বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে ফেলে একাধিকবার ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছে। একজনকে ফেল করিয়ে দিয়ে এবং আরেকজনকে বাসায় ডেকে অন্যের খাতা দেখে লেখার সুযোগ দিয়ে ধর্ষণের কথা জানিয়েছে সে। এছাড়াও ২০১৫ সালে এক শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে ২০১৬ সালে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাকে ধর্ষণ করেছে।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ভয়ে অভিভাবকদের কাছে শিক্ষকের অনৈতিক আচরণের কথা বলেনি শিক্ষার্থীরা।’
দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করলেও শিক্ষক আরিফুল ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু সম্প্রতি নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে সম্প্রতি ধরা পড়ে সে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব হাসান জানান, ২৭ জুন ধরা পড়ার তিন-চার দিন আগে হাই স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয় শিক্ষক আরিফুল ইসলাম। বিষয়টি ওই শিক্ষার্থী তার বাবা-মা ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানায়। পরে স্থানীয় লোকজন ওই শিক্ষককে ধরে তার মোবাইল ফোন সার্চ করে একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও দেখতে পায়। এরপর ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক র্যাব-১১ কে বিষয়টি জানায়। র্যাব এসে শিক্ষক আরিফুল ইসলাম ও তাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে আটক করে।