শীর্ষ খবর
‘ঈদ উদযাপন করবো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে’
ঈদ উদযাপন যেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার উপলক্ষে না হয়ে উঠে সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেবল আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঘোরাঘুরি না করার জন্যও জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বাংলাদেশের জনগণসহ দেশ ও বিশ্ববাসীকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়। কাজেই জনসমাগম এড়াতে না পারলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। এ কারণে কষ্ট হবে জেনেও আমরা বাধ্য হয়েছি মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে। দোকান-পাট, শপিংমলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখতে হচ্ছে। একই কারণে গণপরিবহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এমনি এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঈদ উদযাপন করবো, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কোনোভাবেই এ ঈদ উদযাপন যাতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার উপলক্ষ হয়ে না উঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। জনগণের প্রতি অনুরোধ: আপনারা আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে যাবেন না। অনেকের কোনো বাহ্যিক লক্ষণ না থাকায় আপনি বুঝতে পারবেন না পাশের ব্যক্তিটিই করোনা ভাইরাস বহন করছে। এর ফলে আপনি যেমন করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়বেন, তেমনি আপনার নিকটাত্মীয় বা প্রতিবেশিকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন। মনে রাখবেন, সবার ওপরে মানুষের জীবন। বেঁচে থাকলে আসছে বছর আবার আমরা আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে গত বছরের মতো এ বছরও ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মসজিদে মসজিদে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। আসুন, আমরা সবাই যে যেখানে আছি সেখান থেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। করোনা মহামারি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এ ভাইরাস একদিকে যেমন অগণিত মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিসাধন করছে মানুষের জীবন-জীবিকার। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এ ভাইরাস।
তিনি বলেন, গত বছরের শেষদিকে যখন বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ অনেকটা কমতে শুরু করেছিল, তখন সবার সঙ্গে আমরাও আশান্বিত হয়েছিলাম যে বিশ্ববাসী বুঝি এ মহামারি থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি থেকে দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের সব পরিকল্পনা ও প্রত্যাশাকে নস্যাৎ করে দেয়। জনগণের সহযোগিতায় এবং আমাদের সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আমরা বিগত এক বছর করোনা মহামারিজনিত আর্থিক অভিঘাত খুব ভালোভাবেই সামাল দিতে পেরেছি। আমরা যখন প্রথম ঢেউ সামলিয়ে অর্থনীতিকে আগের অবস্থার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার পর্যায়ে, তখনই মার্চে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। এতে করে আমাদের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধিতে হয়তো খানিকটা ভাটা পড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেবে এবারও আমরা আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবো। গত সপ্তাহে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। বেশির ভাগ ধান এরইমধ্যে চাষিভাইদের ঘরে উঠেছে। সুষ্ঠুভাবে ধান কাটা-মাড়াইয়ের জন্য আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে হারভেস্টার বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের (ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ) নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় কৃষকদের ধান কাটতে সহায়তা করছে। পবিত্র রমজান মাসে আমাদের দলের কর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ইফতার এবং সেহরি বিতরণ করেছে। চাষি ভাইয়েরা যাতে তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পান, সেজন্য এবার চালের সংগ্রহ মূল্য কেজি প্রতি ৪০ টাকা এবং ধানের মূল্য ২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের প্রতি অনুরোধ কররো, এ দুঃসময়ে আপনার দরিদ্র প্রতিবেশি, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ান। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার সাহায্য হয়তো একটি পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোঁটাবে। দেখবেন, তাদের হাসিমুখ আপনার হৃদয়মনকেও পরিপূর্ণ করে তুলবে ঈদের আনন্দে। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় কর্তব্য। আমরা যেন এ কর্তব্যকর্ম ভুলে না যাই।