আজকের সিলেট
এখনো আমরা স্প্রিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি : মাসুক উদ্দিন আহমদ
২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। আগস্ট মাসেই আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার সহ সকল শহীদদের হারিয়েছি। সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
মহান আল্লাহপাক তাদের বেহেশত নসীব করুন। আপনারা জানেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার জন্য এই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিহত করার পরে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম দিকে এক দিনের জন্যও স্বাধীনতা বিরোধী ও তাদের দোষররা জননেত্রীকে শান্তি থাকতে দেয় নাই। প্রিয় নেত্রীর ওপর বিভিন্নভাবে হামলা করা হয়েছে। এই আগস্ট মাসেই কয়েকটি হামলা করা হয়েছে। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
২০০৪ সালের ৭ই আগস্ট সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ওপর হামলা। ইব্রাহিম ভাই নিহত হন এবং আমাদের জাকির সহ অনেকেই আহত হন। জননেত্রী শেখ হাসিনা সকল আহত নেতৃবৃন্দকে সিলেটে এসে দেখে যান। জঙ্গি গোষ্ঠী ১৭ আগস্ট সারা দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা করে। পরবর্তীতে ২১ শে আগস্ট জননেত্রীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বোমা হামলা করে। আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে যান। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানসহ সহ অনেকেই নিহত হন।
আমাদের প্রিয় নেত্রীও সেইদিন কানের মধ্যে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলেন। আজও তাঁর কানের যন্ত্রণা পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মূলত আওয়ামী লীগ সহ দেশের নামি-দামি বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এই হামলা করেছিল। তারেক জিয়া, বাবর ও হারিছ চৌধুরী পরিকল্পনা করে এই ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন। আগামী ৫ বছরে দেশ ৪০তম সমৃদ্ধ দেশের পর্যায়ে পৌঁছাবে।
তবে রাজনীতির পথচলায় আমাদেরকে মোনাফেক ও বেঈমানদের চিহ্নিত করতে হবে। সৎ ও স্বাচ্ছা নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। চলুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাই। আর জঙ্গিবাদ দমনে সবাই সর্বদা সোচ্চার হই। কারণ জাতির পিতার মাটিতে জঙ্গিবাদের স্থান নেই।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে সকাল ১১ টায় চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সম্মুখে মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজিত মানববন্ধনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন এর পরিচালনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে মহানগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন আজকের মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে।
আপনারা দেখেছেন ২০০৪ সালে এই জঙ্গিগোষ্ঠী প্রথমে সিলেট শাহজালাল দরগাহ (রহ.) মাজারে ওরোছকে সামনে রেখে এবং আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বোমা নিক্ষেপ করেছিল। তারপর তারা ৭ ই আগস্ট গুলশান সেন্টারে মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বোমা নিক্ষেপ করে ইব্রাহিম ভাইকে হত্যা করেছিল এবং আমি সহ মহানগরের অনেক নেতৃবৃন্দ সেইদিন আহত হয়েছিলেন। এখনো আমরা স্প্রিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ভাইকে টিলাগড়ে বোমা নিক্ষেপ করেছিল।
আমরা যখন আহত হয়ে হাসপাতালে ছিলাম তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে ও বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় গিয়ে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে সভা করবো। কিন্তু ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের শক্তির জানান দিতে চেয়েছিল।
জামাআতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) বাংলাদেশ নামের এই জঙ্গি সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৩টি জেলায় একই সময়ে সিরিজ বোমা হামলা চালায়। মুন্সীগঞ্জ ছাড়া সব জেলায় প্রায় ৫০০ পয়েন্টে বোমা হামলায় দু’জন নিহত ও অসংখ্য লোক আহত হন। কিন্তু গ্রেনেড হামলার পরেও আওয়ামী লীগ ঘরে যায় নাই। শরীরে গ্রেনেডের স্প্রিন্টার নিয়েও আমরা রাজনীতির ময়দান ত্যাগ করি নাই। যে কোনো দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আরও বেশি শক্তিশালী হয়। তার প্রমাণ ইতিমধ্যে নেতাকর্মীরা দিয়েছে। লক্ষ্য করুন, ২১ শে আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে তারেক জিয়া ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর গ্রেনেড হামলার নীল নকশা তৈরি করেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহপাক জননেত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ ছিলেন বলেই সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার সহ সকল শহীদদেরকে হত্যা করার মাধ্যমে তারা নব্য পাকিস্তান রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষ্টি বলে এই দেশ অসাম্প্রদায়িক ও শান্তি প্রিয় রাষ্ট্র। প্রিয় নেত্রীর নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ও আওয়ামী লীগ করোনার মত অতিমারি সহ সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের রাজনীতি করে। ভোগবাদের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, ত্যাগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। ত্যাগীদের রাজনীতি করার উৎকৃষ্ট প্ল্যাটফর্ম হল আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। চলুন আমরা শপথ নেই, স্বচ্ছ ধারার রাজনীতি করবো, জনগণ যা চায় সেই অনুযায়ী রাজনীতি করবো এবং নেত্রীর পছন্দের রাজনীতি করবো। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আরোএগিয়ে যাবো। ইনশাআল্লাহ।
এসময়ে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, নুরুল ইসলাম পুতুল, মো. সানাওয়র, জগদীশ চন্দ্র দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, দপ্তর সম্পাদক খন্দকার মহসিন কামরান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নজমুল ইসলাম এহিয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আজাহার উদ্দিন জাহাঙ্গীর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ জুবের খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ শামীম আহমদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্ত্তী রনি, সহ-প্রচার সম্পাদক সোয়েব আহমদ, উপদেষ্টা কানাই দত্ত।
মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্যবৃন্দ নুরুন নেছা হেনা, এডভোকেট মোহাম্মদ জাহিদ সারোয়ার সবুজ, এমরুল হাসান, সুদীপ দে, সাইফুল আলম স্বপন, রোকসানা পারভীন, জামাল আহমদ চৌধুরী, খলিল আহমদ, আবুল মহসিন চৌধুরী মাসুদ, ইঞ্জিঃ আতিকুর রহমান সুহেদ, শিপা বেগম শুপা,জুমাদিন আহমেদ, মাহফুজ চৌধুরী জয়, ইলিয়াছ আহমেদ জুয়েল, মহানগর তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল হাসনাত বুলবুল। মহানগর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মুহিবুর রহমান সাবু, হাজী মো. ছিদ্দেক আলী,সালউদ্দিন বক্স সালাই, ফখরুল হাসান ফখরুল, দেলোওয়ার হোসেন রাজা, তাজ উদ্দিন লিটন, জায়েদ আহমেদ খাঁন সায়েক, নজরুল ইসলাম নজু, এডভোকেট মোস্তফা দিলোয়ার আজহার, মো. বদরুল ইসলাম বদরু, মানিক মিয়া, এডভোকেট বিজয় কুমার দেব বুলু, ফজলে রাব্বি মাসুম, শেখ সোহেল আহমদ কবির, এম.এন ইসলাম সহ শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।