আজকের সিলেটসুনামগঞ্জ
সিলেটে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস সুনামগঞ্জে
সিলেট বিভাগের গড় দারিদ্র্য হার ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এই বিভাগে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায়, ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য মতে দেশে সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষ বাস করে রাজধানীর গুলশানে, আর সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে। জেলাটির রাজীবপুর উপজেলায় প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এরপরই রয়েছে বান্দরবানের থানছি। এই উপজেলায় প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘পোভার্টি অ্যান্ড আন্ডারনিউট্রিশন ম্যাপস বেজড অন স্মল এরিয়া এস্টিমেশন টেকনিক’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিবিএস ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিওএফপি) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
দেশের ৫৭৭টি উপজেলার দারিদ্র্য অবস্থা বিশ্লেষণ করে দারিদ্র্য মানচিত্র তৈরি করেছে বিবিএস। তবে মানচিত্র তৈরিতে ২০১৬ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
মানচিত্রে দেখা যায়, সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বাস রাজধানীর গুলশানে। অভিজাত এলাকাটির মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। অপরদিকে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বসবাস করে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায়। চরাঞ্চলবেষ্টিত এলাকাটিতে ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর জেনি পিয়ার্সি, বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে গড় দারিদ্র্য হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দেশের ১১৫টি উপজেলা অতিদরিদ্র। উপজেলার সংখ্যায় দারিদ্র্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য দেখা যায় চট্টগ্রাম বিভাগে। অতি নিম্ন দারিদ্র্য হার গ্রুপে বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোনো উপজেলা নেই। এ তালিকায় রংপুর ও সিলেট বিভাগের একটি করে উপজেলা রয়েছে।
তবে, ঢাকা বিভাগের ৭৭টি উপজেলা ও মেট্রো থানা অতি নিম্ন দারিদ্র্য হার গ্রুপে রয়েছে।
বিভাগওয়ারি দারিদ্র্য হারের দিক দিয়ে বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তবে এ বিভাগের পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায় দারিদ্র্য হার ৫২ দশমিক 8 শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিভাগে গড় দারিদ্র্য হার ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র বান্দরবানের থানচি উপজেলায়, ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে গড় দারিদ্র্য হার ১৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দরিদ্র কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায়, ৬১ দশমিক ২ শতাংশ। খুলনা বিভাগে গড় দারিদ্র্য হার ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই বিভাগে মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
ময়মনসিংহের গড় দারিদ্র্য হার ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ বিভাগে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়, ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগে গড় দারিদ্র্য হার ২৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এই বিভাগে নওগাঁর পোরশা উপজেলায় ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
রংপুরে গড় দারিদ্র্য ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। এই বিভাগে বেশি দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা কুড়িগ্রামের চররাজীবপুর, ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
সিলেটে গড় দারিদ্র্য হার ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এই বিভাগে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায়, ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ।
সেমিনারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘এসডিজি অর্জনে সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য রয়েছে- দারিদ্র্য দূর করা ও ক্ষুধা দূর করা। দুটি লক্ষ্যের দিকে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে গেছে। এসডিজির বিভিন্ন লক্ষ্যের ক্ষেত্রে ডাটা স্বল্পতা অনেক বড় সমস্যা। বিভিন্ন সূচকের মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ ডাটা আমাদের কাছে রয়েছে। এ জন্য এসব খাতে আমাদের অগ্রগতির মূল চিত্র উঠে আসছে না।
‘বিবিএসকে বলব, সব ডাটা যেন আরও দ্রুত এবং সময়মতো দেয়া হয়। না হলে অনেক সময় এসব ডাটা উপযোগিতা হারায়। আমাদের এলাকাভিত্তিক পোভার্টি ম্যাপিং এবং নিউট্রেশন ম্যাপিং করতে হবে, যাতে কোন এলাকায় কী অবস্থা তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি।’
বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা উপজেলা ও মেট্রোপলিটনভিত্তিক দারিদ্র্য হার বের করেছি। এটা দেরিতে করতে হয়েছে নানা কারণে। সামনে আরও দ্রুত সময়ে উপজেলাভিত্তিক দারিদ্র্য হার বের করব। তবে দারিদ্র্য হার বের করায় অনেক সংসদ সদস্য খুশি নন। অনেক সংসদ সদস্য দারিদ্র্য হার বেশি দেখানোর জন্য বলছেন, যাতে করে বেশি বেশি সুবিধা ভোগ করা যায়।’