আজকের সিলেট
কে আসছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে?
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি। নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফ্যাস্টুন ও তোরণে তোরণে নতুন সাজে সেজেছে সিলেট নগরী। সম্মেলন স্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রসা মাঠকে ঘিরেও শুরু হয়েছে সব প্রস্তুতি। নৌকার আদলে তৈরী করা হয়েছে সম্মেলনের মঞ্চ।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ সম্মেলনকে ঘিরে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পাশাপাশি রয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। পদ প্রত্যাশি নেতারাও সেই উৎসবে শামিল হলেও পছন্দের পদ পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে তারা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। কে আসছেন আগামী নেতৃত্বে? এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। শুধু পদ প্রত্যাশি নেতারাই নয়, তাদের অনুসারীদের মাঝেও একটাই প্রশ্ন; আগামী দিনগুলোতে কে হচ্ছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি?
নতুন নেতৃত্বে কারা আসতে পারে এ নিয়ে শোনা যাচ্ছে নানান কথা। পুরনোদের পাশাপাশি নতুন অনেক নামও আলোচিত হচ্ছে। দুই কমিটির শীর্ষ দুটি করে মোট ৪ পদের জন্য অন্তত এক ডজন দৌড়ঝাঁপ করছেন। শহরজুড়ে বিলবোর্ড, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে তারা প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে আছেন বিতর্কিত অনেকেও।
১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে মহানগর কমিটির সম্মেলন করার নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রের। এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা হয়।
সভায় ৩০ নভেম্বর মহানগর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সম্মেলন সামনে রেখে ইতিমধ্যে ২৭টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন হয়েছে। এখন চলছে মহানগরের সম্মেলন প্রস্তুতি।
অনুসারীদের ধারণা, কামরান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হতে পারেন। রদবদলের প্রক্রিয়ায় পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার আশ্বাস পেলে কামরান সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ হতে পারেন সভাপতি। অথবা কামরানকে সভাপতি রেখে পরিবর্তন আসতে পারে সাধারণ সম্পাদক পদেও। এ ক্ষেত্রে আসাদকে দেখা যেতে পারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এ ধরনের পরিবর্তনের গুঞ্জন এখন দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে।
এদিকে আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মুখে মুখে রয়েছে গত সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবির বিষয়টি। কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ওই পরাজয়কে দেখা হয় সাংগঠনিক ব্যর্থতা হিসেবে।
সিটি নির্বাচনে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের নীরব বিরোধিতা কামরানের পরাজয় বলে মনে করছেন কামরান অনুসারীরা। তবে প্রার্থীর ইমেজ সংকটের কারণেই সিলেটে নৌকার ভরাডুবি হয় বলে দাবি আসাদের। এ অবস্থায় মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার যে কোনো একজন পদবঞ্চিত হতে পারেন।
সভাপতি পদ পরিবর্তন হলে আসাদ ছাড়াও এ পদে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন : মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মফুর আলী ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর আবদুল খালিক। যুগ্ম সম্পাদক সাবেক সিটি কাউন্সিলর ফয়জুল আনোয়ার আলাওরের নামও আলোচনায় আছে।
এ ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বিজিত চৌধুরী, অধ্যাপক জাকির হোসেন, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক, বিসিবির পরিচালক, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, পরিবেশ সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র দাস, শিক্ষা সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপনমিত্র এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী।
শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটি। আব্দুজ জহুর চৌধুরী সুফিয়ান মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লুৎফুর রহমান। তিনি এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হবেন বলে মনে করেছিলেন অনেকে। প্রবীণ লুৎফুর রহমানের উপর দলীয় প্রধান ভরসা রাখলে সভাপতি পদের জন্য আলোচিত বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীকে আবারও দেখা যেতে পারে সাধারণ সম্পাদক পদে। এই পদে তিনি বেশ সফল বলেই মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতি আছে শফিকের। একই সাথে দলের জন্য বারবার আত্মত্যাগ করে নেত্রীর গুড লিস্টেও রয়েছেন তিনি।
শফিকুর রহমান চৌধুরী আবার সাধারণ সম্পাদক হলে স্বপ্ন ভঙ্গ হবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশি বর্তমান সহসভাপতি শাহ ফরিদ আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, নিজাম উদ্দিন ও সুজাত আলী রফিক, কোষাধ্যক্ষ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোশাহিদ আলী, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক রণজিৎ সরকার, উপ-দফতর সম্পাদক জগলু চৌধুরীর।