প্রবাস
বার্লিনে জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ে বাসুগ এর কর্মশালা অনুষ্ঠিত
বার্লিন, ১৯ মে : জার্মানির রাজধানী বার্লিনে শনিবার ১৮ মে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজনে বিকল্প কৃষি প্রক্রিয়া এবং অভিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন উদ্যোগ বিষয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জার্মান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেড-সিম এর অর্থনৈতিক সহায়তায় ইউরোপ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা বাসুগ এবং নেপালি উন্নয়ন সংস্থা সল্ভ নেপাল এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন জার্মানিতে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত রামেশ প্রসাদ খানাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর ডঃ সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী। ডায়াসপোরা উন্নয়ন উদ্যোগে জিআইজেড/সিম এর সহায়তা কর্মসূচী এবং প্রেক্ষিত নেপাল বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিথি বক্তা জিআইজেড/সিম এর জুনিয়র প্রকল্প ব্যবস্থাপক মারিয়ুস ইয়েডলিচকা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সল্ভ নেপাল এর নির্বাহী পরিচালক রাজেন্দ্র বাহাদুর প্রধান এবং বাসুগ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া।
বাসুগ জার্মানির প্রকল্প কর্মকর্তা মারিনা জোয়ারদার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টার এর জার্মান প্রতিনিধি নাজমুন্নেসা পিয়ারী, ডয়েচে ভেলের প্রাক্তন সাংবাদিক এবং সীমান্ত সাময়িকীর সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, খালেদ নোমান নমি এবং বাসুগ সদস্য নুবায়রা নোভা।
কর্মশালার প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত খানাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার নারী এবং শিশুরা। আমাদের সমাজের বিশেষভাবে পিছিয়ে পড়া নারী জনগোষ্ঠী কোনভাবেই দারিদ্র্যের দুষ্ট শেকল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। সেক্ষেত্রে একমাত্র দৃশ্যমান সমাধান হতে পারে বট্ম-আপ কৌশল, যা পিরামিডের একেবারে নিচে থাকা মানুষগুলোর এবং বিশেষভাবে নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনের মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নে আমাদেরকে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া তাদের কাছে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা সহজলভ্য করতে হবে যাতে করে কার্বন নির্গমণ কম হয়। নারীর ক্ষমতায়ন শুধুমাত্র একটি নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বই নয়, বরং এটি একইসাথে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর ডঃ চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু বিশ্লেষণ থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব উঁচু স্তরে এবং জটিল ভৌগলিক পরিমণ্ডল যেমন নেপালের পাহাড়ি অঞ্চলে বেশিমাত্রায় ঘটে। প্রায় এক দশক আগে এক প্রাথমিক জরিপে দেখা গেছে যে, গঙ্গা এবং ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় পানির প্রবাহ পাল্টে যাবে এবং পরিণামে বন্যা, খরাসহ প্রাকৃতিক বৈষম্য পাল্টে যাবে। এটা এখন পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে যে, নেপালে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে এবং বৃষ্টিপাতের হার এবং মাত্রায় পরিবর্তন ঘটেছে। তাই এখনই আমাদেরকে নেপাল ও বাংলাদেশের মতো হুমকির মুখে থাকা দেশগুলো সহ এই ধরণীকে বাঁচাতে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে এবং অভিযোজনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাসুগ চেয়ারম্যান বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, জলবায়ু ব্যবস্থাপনায় এবং এর ঝুঁকি মোকাবেলায় নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কৃষিক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা এবং ঝুঁকির ক্ষেত্রে তাদের অগ্রণী সাড়ার কারণে তারা সহজে জলবায়ু অভিযোজনে এবং টেকসই উন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারে। তাই তাদের ক্ষমতায়নে তাদের কাছে সঠিক তথ্য এবং দক্ষতা বৃদ্ধি জরুরী।
অভিবাসীরা বর্তমানে শুধুমাত্র নিজের মাতৃভূমি কিংবা প্রবাসভূমিতে একমুখী উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখছে না, বরং উভয় দেশেই বহুমুখী উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। বাসুগ এবং সল্ভ নেপালের এই সমন্বিত উদ্যোগ তারই একটি উদাহরণ। এভাবে অভিবাসনের উভমুখী উন্নয়ন কার্যক্রমের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের বিরুদ্ধে বিরাজমান নেতিবাচক প্রবণতার পরিবর্তন করতে হবে।
বাসুগ এর যুক্তরাজ্য সমন্বয়ক আনসার আহমেদ উল্লাহর সঞ্চালনায় কর্মশালার কারিগরি অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পারষ্পরিক যোগসূত্র বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্মানির পটসডাম ইন্সটিটিউট ফর ক্লাইমেট রিসার্চ এর গবেষক ডঃ প্রজাল প্রধান। ডায়াসপোরা উন্নয়ন উদ্যোগ এবং গণমাধ্যম বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডয়েচে ভেলের এশিয়া বিভাগের সম্পাদক মানসী গোপালাকৃষ্ণন এবং পরিবেশ ও উন্নয়ন এর জন্য ডায়াসপোরা উদ্যোগ এবং পরিপ্রেক্ষিত নেপাল বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাসুগ জার্মানির প্রকল্প সমন্বয়কারী এবং বন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক এ এইচ এম আব্দুল হাই। প্রকল্পের আওতায় নেপালের পিছিয়ে পড়া নারীগোষ্ঠীর উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অভিযোজন বিষয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র দেখানো হয় কর্মশালায়।
কর্মশালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল নেপালের সুবিধাবঞ্চিত নারী ও যুবগোষ্ঠী, পরিবেশ বিষয়ক নীতি-নির্ধারক, পরিবেশ কর্মী এবং স্থানীয় উন্নয়ন কর্মীদের মাঝে জলবায়ু অভিযোজন, টেকসই উন্নয়ন এবং খাদ্য নিশ্চয়তা বিধানের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি। এছাড়া অভিবাসী জনগোষ্ঠী নিজ নিজ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কিভাবে উন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে সেসব বিষয়েও উদবুদ্ধকরণ ছিল এই কর্মশালার অন্যতম লক্ষ্য। কাঠমান্ডূ কর্মশালা ছাড়াও একই বিষয়ে লক্ষিত জনগোষ্ঠীর সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ললিতপুর এবং কাঠমান্ডূতে দুটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।