আজকের সিলেট
মামলায় অভিযুক্তরাই বিচার চায় গণধর্ষণের!
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা মুহুর্তের মধ্যে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। শুক্রবার রাতে ঘটনার পর সারারাত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ধর্ষণের সাথে জড়িত থাকা কয়েক জনের ছবি। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মানুষ তীব্র ক্ষোভ নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের সাথে শামিল হয়েছেন খোদ মামলার আসামীরাই!
পুলিশ খোঁজে না পেলেও ফেসবুকে সরব রয়েছে আসামীরা। শনিবার সকালেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে এই মামলার দুই আসামীকে। স্ট্যাটাসে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
গণধর্ষণের মামলার ৫ নম্বর আসামী রবিউল ইসলাম শনিবার সকাল ১১ টার দিকে ফেসবুকে লেখেন-
সম্মানিত সচেতন নাগরিকবৃন্দ
আমি রবিউল হাসান। আমি এম সি কলেজের একজন শিক্ষার্থী। আপনারা অনেকেই চিনেন, আমি কেমন মানুষ তা হয়তো অনেকেই জানেন। গতকাল এম সি ছাত্রাবাসে গনধর্ষনের সাথে, কে বা কারা আমাকে জড়িয়ে অনেক অনলাইন নিউজ করিয়েছেন, আমি এম সি কলেজ ছাত্র, কিন্তু আই হোস্টেলে কখনোই ছিলাম না, আমি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ করছি, আমি যদি এই নির্মম গনধর্ষনের সাথে জড়িত নই, আমাদের পরিবার আছে।যদি আমি এই জঘন্যকাজের সাথে জড়িত থাকি তা হলে প্রকাশে আমাকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আমি কোনো ভাবেই এই কাজের সাথে জড়িত নই। সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি সত্য না যেনে আমাকে এবং আমার প্রানের সংঘটন ছাত্রলীগের নাম কোনো অপপ্রচার করবেন না।
এমসি বিশ্ববিদ্যালের ছাত্রাবাসে গনধর্ষণকারী সকল নরপশুদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এরআগে এই মামলার ৬ নম্বর আসামী মাহফুজুর রহমান মাসুম ফেসবুকে লেখেন-
এরকম জঘন্য কাজের সাথে আমি জড়িত না। যদি জড়িত প্রমাণ পান প্রকাশ্যে আমাকে মেরে ফেলবেন। একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস আছে। আল্লাহ আমাকে নির্দোষ প্রমান করবেন।
তবে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগে আমাকে সুইসাইডের দিকে নিয়ে যাওয়া আপনাদের বিচার আল্লাহ করবেন।
বাকি আসামীদের কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।
ফেসবুকে সরব থাকার পরও আসামীদের গ্রেপ্তার করতে না পারা প্রসঙ্গে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম চৌধুরী জানান, আমরা তাদের গ্রেপ্তারে সবধরণের চেষ্টা চালাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকেলে স্বামীর সাথে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক তরুণী। সন্ধ্যায় তাদের কলেজ থেকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে আসে ছাত্রলীগের ৫/৬ জন নেতাকর্মী। এরপর দুজনকে মারধর করে স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে তারা। রাতে ছাত্রাবাস থেকে এই দম্পত্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় শনিবার সকালে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ২/৩ জনের বিরুদ্ধে শাহপরাণ থানায় মামলা করেন ধর্ষিতার স্বামী।
মামলায় এজহারনামীয় আসামীরা হলেন, এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আসামীদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।
ধর্ষণের ঘটনার পর রাতভর ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। তবে আসামীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।