শীর্ষ খবর
আগুন-ছিনতাই আর অপকর্মের পাহাড় নিয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে রবিউল
ছাত্রাবাসে আগুন দেয়া, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক সেবনসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। এতএত অভিযোগ থাকা সত্বেও ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে গত শুক্রবার জন্ম দেন সিলেটের ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনার। পুরো দেশ নিন্দা আর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফলে গ্রেফতার হন রবিউল।
সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নববধূ গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ নম্বর আসামি রবিউল ইসলামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে । গত রোববার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
রবিউলের বাড়ি দিরাইয়ের জগদল গ্রামে। গ্রেপ্তার এড়াতে সে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কাজীগঞ্জ বাজারের নিজআগনা গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলো। রবিউল এমসি কলেজে পড়াশোনা করে এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
গতকাল সোমবার রবিউল ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, রবিউল ইসলামের বাবা দেলোয়ার হোসেন (৬৫) জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে দোষ করে থাকলে শাস্তি হোক, এটা তিনিও চান। তিনি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে নেই।
তবে তিনি মনে করেন, তাঁর ছেলে এমন জঘন্য কাজ করেননি।
রবিউল ইসলামের বাবা দেলোয়ার হোসেন জানান, তাঁর পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে। রবিউল পড়াশোনার জন্য ২০১৪ সালে সিলেটে যান। সিলেট নগরে প্রথমে তাঁর নানার বাড়িতে থাকতেন। পরে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ওঠেন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রবিউল মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসত। বিশেষ করে বৈশাখ মাসে বোরো ধান কাটার সময়। তাঁর চলাফেরায় পরিবারের লোকজন কখনো চিন্তাও করতে পারেনি সে এমন কাজ করতে পারে। আমি বৃদ্ধ মানুষ। আমার এক কথা, আমি কোনো অন্যায়ের সাথে নেই। সে (রবিউল) দোষ করলে সাজা হোক। আর যদি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়, তাহলে আল্লাহ আছেন। বরিউলের মা ও বোনদেরও একই কথা। দোষ করলে তার যেন শাস্তি হয়।’
বড় নগদীপুর গ্রামের দুজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, রবিউল ইসলাম গ্রামে কম যেতো। তার বাবা তেমন কোনো কাজ করেন না। তবে শুনেছি রবিউল ইসলাম সিলেটে রাজনীতি করে। তার বিরুদ্ধে নানা ঘটনায় সিলেটে মামলা থাকার বিষয়টিও গ্রামের লোকজন শুনেছেন। সিলেটে এক আওয়ামী লীগ নেতার প্রশ্রয়ে ছিলো রবিউল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার মামলা এবং আরেকটি ছিনতাই মামলারও আসামি রবিউল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে সিলেট থেকে পাঠানো দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমসি কলেজে অধ্যায়নরত দিরাইয়ের এক ছাত্র সিলেটভিউ-কে জানায়, আদাব সালাম না দিলে শিক্ষার্থীদের মারধর করে আহত করতো রবিউল। শুধু তাই নয়, মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকা পেলেই নারী শিক্ষার্থীদের ওড়না ধরে টান মারা, মদ-জোয়া, ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, বিনা কারণে শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা, হোস্টেলে জোরপূর্বক বসবাস, মিল না দিয়ে বন্ধুবান্ধবসহ খাওয়া, হোস্টেলের সিট বিক্রিসহ নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো সে।