আজকের সিলেট
দুই লিডারের বিরোধ এখন দুই উত্তরসূরীর
পুরনো ক্ষত আবার দেখা দিচ্ছে। গোপন নয় এখন যেন সেই বিরোধ প্রকাশ্যেই চলে আসছে। নিজ ঘরের আগুনেই পুড়ছে সিলেট বিএনপি। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরোধ বিজয় দিবসের দিন প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এ দুই নেতা এদিন তাদের বিপুলসংখ্যক অনুসারী নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন করেন। দেশের রাজনীতিতে বিএনপির বর্তমান অবস্থায় এ দুই নেতার দ্বিমুখী কর্মকাণ্ড এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত-সমালোচিত।
কর্তৃত্ব নিয়ে নাকি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান সামনে রেখে তারা জানান দিলেন নিজেদের শক্তি। তবে দুর্দিনে আঁকড়ে ধরে রাখা মুক্তাদিরের পক্ষে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির বর্তমান দায়িত্বশীল নেতাদের উপস্থিতি ছিল বেশি।
খন্দকার মুক্তাদির গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও শরিক দলের প্রার্থী হয়ে সিলেট-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আর সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। মুক্তাদির নির্বাচনে পরাজিত হলেও আরিফ টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। এতদিন ভেতরে ভেতরে ছিল দুই জনের বিরোধ। এখন প্রকাশ্যে তাদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সিলেটের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে।
খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের পিতা জীবদ্দশায় খন্দকার আব্দুল মালিক ছিলেন সিলেট বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। বিএনপির ভেতরে সিলেটে খন্দকার পরিবারের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। দুর্দিনে জিয়া পরিবারের পাশে ছিল তার পরিবার। কিন্তু সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম সাইফুর রহমান ও খন্দকার মালিকের সম্পর্ক মধুর ছিল না। বিষয়টি প্রকাশ্যে না হলেও রাজনৈতিক মহলে সেটা বেশ আলোচিত ছিল। তখন থেকেই এম সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। ‘আজ ঐ দুই নেতাই পরপারের বসিন্দা। কিন্তু তাদের বিরোধ উত্তরাধিকারী সূত্রে’—এমন মন্তব্য করে সচেতন মহলের অনেকেই বলেন, পুরোনো বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। দুই লিডারের বিরোধ এখন দুই উত্তরসূরীর মধ্যেও দেখা দিয়েছে।
খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের ঘনিষ্টজনেরা জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপি’র মুলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি দলাদলি কিংবা কোন্দল পছন্দ করেন না। এ কারণে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের দেয়া কমিটির সঙ্গে তার অবস্থান। সিলেটে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির যেসব দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তাতে সম্পৃক্ত থাকেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি’র দায়িত্বশীল নেতারা। গত ১৬ই ডিসেম্বর শোডাউনের দিন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের ডানপাশে ছিলেন মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন ও বামপাশে ছিলেন সিলেট জেলা আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। সিলেট জেলা মহানগর বিএনপি’র দায়িত্বশীল সিংহভাগ নেতা তার সঙ্গে শোডাউনে অংশ নেন। এছাড়া সিলেটের যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের বর্তমান দায়িত্বশীল নেতারা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সঙ্গে শোডাউনে অংশ নেন।
এদিকে- সিলেট বিএনপিতে গত ২ বছরে নানা ঘটনা ঘটে গেছে। সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি, যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি এবং ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে নানা সময় ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ নেতারা প্রতিবাদী হয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ সিলেটে অবস্থানরত ৪ কেন্দ্রীয় নেতার কাছে ছুটে যান। কেন্দ্রীয় অপর ৩ নেতা হচ্ছেন- কেন্দ্রীয় সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান ও কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী। তারা বিক্ষুব্ধদের শান্তনা দিয়ে পাশে দাঁড়ান। আরিফুল হক চৌধুরী বলয়ের নেতারা জানিয়েছেন- দলের ভেতরে পদবঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ থাকতে পারে। তারাও বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মী। তাদের রেখে কখনোই বিএনপি এগিয়ে যেতে পারে না। বাদপড়া ত্যাগী নেতাকর্মীদের পরবর্তীতে দলের ভেতরে জায়গা করে দিতে আরিফ সহ দলের কেন্দ্রীয় ৪ নেতা নানা সময়ে উদ্যোগী হন। কিন্তু তাদের সেই উদ্যোগকেও সফল করতে দেয়া হয়নি। বরং পদপ্রাপ্ত নেতারা সিলেটে বিএনপি’র একমুখী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এ কারণে শেষ পর্যন্ত আরিফ সহ ওই ৪ কেন্দ্রীয় নেতা ক্ষুব্ধ কিংবা বাদপড়া অংশকে নিয়ে সিলেটে শোডাউন দিয়েছেন। সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটিতে এখন বিরোধ সবচেয়ে বেশি। বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, আব্দুল মান্নান সহ আহ্বায়ক কমিটির ৯ নেতা একদিকে অবস্থান নিয়েছেন। কয়েকদিন আগে তারা সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। ক্ষুব্ধ সদস্যরা নিজেদের যৌক্তিক দাবি জানিয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, এডভোকেট জামান, ডা. শাহরিয়ার সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের। তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। আহ্বায়ক কমিটির ওই সদস্য বিজয় দিবসের শোডাউনে আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন। এদিকে- সিলেটের মেয়র ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ওই ৯ সদস্য।