সিলেটের টুকরো খবর

চাচাতো ভাইয়ের নির্যাতনে পরিবার নিয়ে বাড়ি ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষক

সিলেটের ওসমানীনগরে প্রভাবশালী চাচাতো ভাইয়ের নির্যাতন, হয়রানী ও প্রাণনাশের হুমকির কারণে স্কুল পড়ুয়া শিশু সন্তান স্ত্রী সহ পরিবার পরিজন নিয়ে গত ১ মাস ধরে বাড়ি ছাড়া এক অসহায় মাদ্রাসা শিক্ষক। বাড়ি না থার কারণে ঐ মাদ্রাসা শিক্ষকের প্রথম, দ্বিতীয় ও ৪র্থ শ্রেণিতে পড়–য়া তিন শিশুর বিদ্যালয়ে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসের নিকট সুপিচার ও সাংবাদিকদের সহযোগীতা চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে ওসমানীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলার পূর্ব রুকনপুর (ভাড়েরা) গ্রামের মৃত রাহাত উল্যার পুত্র মদিনাতুল উলুম বড় দিরারাই মাদ্রাসার শিক্ষক মাও. আব্বাস আলী অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে তারই চাচাতো ভাই একই গ্রাম ও বাড়ির লন্ডন প্রবাসী প্রভাবশালী মিজানুর রহমান (আক্কাস) বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে আসছেন। এমনকি ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে গুম-হত্যার পরিকল্পনা করছেন মিজানুর রহমান। গত ২১ জুন মিজানুর রহমান তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মাও. আব্বাস আলীকে প্রাণে মারার জন্য তার বাড়িতে র‌্যাব পরিচয়ধারী লোক পাঠান। এক পর্যায়ে র‌্যাব পরিচয়ধারীরা আব্বাস আলীকে বাড়ি থেকে জোর করে সিলেট শহরে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে আব্বাস আলীর সন্দেহ হলে র‌্যাব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার ওসমানীনগর থানা এসআই শহীদুল ইসলামে কাছে দিলে তিনি জানতে পারেন পরিচয়দানকারী ব্যক্তি র‌্যাবের সাথে যুক্ত নয়। মাও. আব্বাস আলী উক্ত বিষয়টি গ্রামের পঞ্চায়েতকে অবগত করে ও নিরাপত্তার জন্য সপরিবারে তার মামার বাড়ি চরে যান। পরবর্তীতে গ্রামের লোকজনের আশ্বাসে আব্বাস আলী আবারো নিজ বাড়িতে ফেরেন। এর কয়েকদিন পর মিজানুর রহমান (আক্কাস) দেশে এসে ২৩ জুন আম ও লেচু চুরির অভিযোগে আব্বাস আলীর পরিবারের লোকজন ও আত্মীয় স্বজনের সহ ৮জনের নাম উল্লেখ করে ওসমানীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১ থেকে ৯ বছরের ৩শিশু, আব্বাস আলীর স্ত্রী ও বোনকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

আব্বাস আলী ও অন্যান্য আসামীরা জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি এসে বাড়িতে দেখতে পান মিজানুর রহমানের বাহিনী তার বসত ঘরের দরজার তালা ভেঙ্গে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট ও মূল্যবান কাগজপত্র তছনছ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মিজানুর রহমান গংরা আব্বাস আলীর ঘরের দরজা এবং বাড়ির গেইটে নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। বাড়িতে ঢুকতে না পেরে আব্বাস আলী তার পরিবারকে নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে তাজপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। বর্তমানে প্রভাবশালী মিজানুর রহমানের অত্যাচারে ও নির্যাতনের ভয়ে নিজ বসত ঘরে যেতে পারছেন না। এমকি মিজানুর রহমানের কারণে আব্বাস আলীর ৩জন শিশু পুত্র হযরত আবু বক্কর(র:) কিন্ডার গার্টেন স্কুলে যাওয় বন্ধ রয়েছে।

মাও,আব্বাস আলী আরো অভিযোগ করে বলেন, মিজানুর রহমান প্রভাবশালী হওয়া এ বিষয়ে মামলা করতে তিনি ওসমানীনগর থানা পুলিশের শ্মরণাপন্ন হলে থানা পুলিশ তা গ্রহণ না করে তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, তার (আব্বাস আলীর) পিতা মৃত রাহাত উল্যা ১৯৭০ সালে তার মাকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য দেশে আসেন। তখন মিজানুর রহমানের পিতা মৃত আমিন উল্যা রাহাত উল্যার লন্ডনের পাসপোট চুরি করে ছবি পরিবর্তন করে লন্ডনে চলে যায়। এ ঘটনায় আমার পিতা রাহাত উল্লাহ স্টোক করে মারা যান। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারী আমিন উল্লাহ লন্ডনে মৃত্যু বরণ করলে লন্ডন ইমিগ্রেশন কর্তৃক তার কাগজপত্র তাল্লাশি করলে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। সে বিষয়ে মিজানুর রহমান সহ আমিন উল্লাহর পরিবারের লোকজনকে লন্ডন পুলিশ গ্রেফতার করে। মিজানুর রহমান জামিনে মুক্তি পেয়ে বর্তমানে দেশে এসে আমাকে (আব্বাস আলীকে) নানা প্রকার হুমকী দিচ্ছে ও মিথ্যে মামলায় হয়রানি করছে। এতে আমার জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে আমি প্রশাসন সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ভুক্তভোগী আব্বাস আলীর স্ত্রী পারভিন বেগম, ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহিদ, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, আব্দুল্লাহ আল মাজিদ, ভগ্নিপতি আব্দুল খালিক, বোন মায়ারুননেছা, ছায়ারুননেছা, প্রবাসী বাইয়ের বৌ হাসিবা বেগম, ভাগিনা মুহিবুর রহমান, সাদিকুর রহমান, ভাগনি লিপি বেগম প্রমুখ।

আরও সংবাদ

Close