খোলা জানালা

একাত্তরের গণশহীদদের চিহ্নিত করতে সরকারের পরিকল্পনা প্রশংসনীয়

আবুল কাশেম আকমল

১৯৭১সালের ২৫শে মার্চ কালোরাত্রী থেকে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। দীর্ঘ ৯ মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন জনপদে নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত হয়। এতে প্রায় ৩০লক্ষ নিরপরাধ লোক শহীদ হন, পঙ্গুত্ব বরণ করেন। স্বাধীনতার ৪৮বছর পার হলেও বাংলাদেশের কোন সরকার শহীদদের তালিকা প্রণয়নের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি যাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হল আমাদের স্বাধীনতা, আমরা পেলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, পেলাম স্বতন্ত্র মানচিত্র ও লালসবুজের পতাকা। কিন্তু সেই সব শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত গাজীরা পাননি সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা। অবশ্য বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর শাসনামলে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত গাজীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে চিঠি দিয়ে শান্তনা জানান এবং সাথে আর্থিক অনুদানের একটি চেকও প্রদান করেছিলেন। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হলে পর বেশ ক’বার ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, কিন্তু অসহায় শহীদ পরিবার ও পঙ্গু গাজীদের কথা কেউ ভাবেনি!

অবশেষে আশার আলো দেখালেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। গত ১৯জুন জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ( নেত্রকোনা ৩) অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একাত্তরের নয়মাসব্যাপী স্বাধীনতাযুদ্ধে সারা দেশে ৩০ লাখ গণশহীদকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এ লক্ষ্যে কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব বীর মুক্তিযোদ্ধার তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজ প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশিত তালিকার বাইরে যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধা থেকে থাকেন, তা শনাক্ত করে ওই তালিকায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে। সংসদ নেতা জানান, ওই তালিকার অংশ হিসেবে বর্তমানে মোট ৫ হাজার ৭৯৫ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, ঠিকানাসংবলিত পূর্ণাঙ্গ তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে গেজেটভুক্ত বেসামরিক শহীদ ২ হাজার ৯২২, গেজেটভুক্ত সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ ১ হাজার ৬২৮, গেজেটভুক্ত বিজিবি শহীদ ৮৩২ ও গেজেটভুক্ত শহীদ পুলিশ ৪২৪ জন। তিনি জানান, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের হাতে নিহত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত গণকবরগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে আমাদের সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর শনাক্তকরণের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের গৃহীত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হবে। (তথ্যসুত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন)

আমরা বর্তমান সরকারের প্রশংসনীয় এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। অনতিবিলম্বে শহীদদের তালিকা প্রণয়ণ করলে ৩০ লক্ষ শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।

“এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা,
আমরা তোমাদের ভুলবনা”

 

লেখকঃ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণাকর্মী ও সাধারণ সম্পাদক, শহীদ গাজী ফাউন্ডেশন, রানীগঞ্জ, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।

আরও সংবাদ

আরও দেখুন

Close
Close