ফিচার
বিজ্ঞান আর রবীন্দ্রনাথ
বিজ্ঞান শব্দের অর্থ বিশেষ জ্ঞান। বিশেষ বিশেষ জ্ঞানে বিশেষজ্ঞরাই বিজ্ঞানী নামে পরিচিত। সাহিত্য ও বিজ্ঞানের মধ্যে দূরত্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ সাহিত্য একটা কল্পনার বিষয়বস্তু যুক্তিসিদ্ধ মননের প্রকাশ। অপরটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা গবেষণার মাধ্যমে স্বতঃসত্য আবিষ্কার করে মানবকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ। সাহিত্যেও রয়েছে মানবকল্যাণের অপার সম্ভবনা। তবে ইংরেজ মনীষী স্নো সিপি দু’য়ের দূরত্বকে মানব সভ্যতার পক্ষে ক্ষতিকারক বলে মনে করেন। মানুষের সামাজিক শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধিতে, শিক্ষানীতিতে, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সঙ্গীতচর্চার কথা বলা হয়েছে।
সমাজের সবাইকে সমান অধিকার বণ্টনের প্রচেষ্টায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা চালায় সমাজবিজ্ঞানীগণ। আর ভাষার মাধ্যমে দুর্বোধ্যতা দূর করার তাগিদে ভাব-ভাষা ও ভাবনাকে সহজ-সরলভাবে উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করার যে প্রচেষ্টা এবং কলাকৌশল অবলম্বন করে ভাষাকে উন্নত করেন ভাষাবিজ্ঞানী। আমরা রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি গান, গল্প, কবিতা, উপন্যাস তথা লেখনির মাধ্যমে তাকে সমাজবিজ্ঞানী ও ভাষাবিজ্ঞানী বললে অত্যুক্তি হবে না। তাই সমাজ থেকে উপাদান সংগ্রহ করতে গেলে সমাজের ব্যক্তি-মানস রবীন্দ্রনাথের পরশ পাওয়া যায়। যে মানুষের কল্পনায় বিপুল সত্য ও সৌন্দর্যের উদ্বোধন এবং সহজ-সরল ভাষায় মত প্রকাশ করাই হচ্ছে রবীন্দ্র চেতনার বহিঃপ্রকাশ। এখানে বিজ্ঞানের শিক্ষা, উপজাত, বোধ, বুদ্ধি, চেতনা, যাতনা প্রতিফলিত হচ্ছে। ‘শিক্ষার মিলন’ (১৯২১) প্রবন্ধের তৃতীয় অনুচ্ছেদে রবীন্দ্রনাথ গল্পের মাধ্যমে কৌশলে বিজ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করেন।
মাত্র সাড়ে বারো বছর বয়সে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ একটি অস্বাক্ষরিত বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধ লেখেন; শিরোনাম- ‘গ্রহগণ জীবের আবাসভূমি’। এটি কিন্তু এখন স্বীকৃত যে, গ্রহগণ জীবের আবাসভূমিই রাবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রকাশিত গদ্য রচনা। পরবর্তী জীবনে রবীন্দ্রনাথ অন্তত দু’ জায়গায় সেই কিশোর বয়সে লেখা রচনাটির উল্লেখ করেছিলেন। এই লেখার অনেক অনেক বছর পার করে শেষ বয়সে এসে কবিগুরু একশ’ পনেরো পৃষ্ঠার আরেকটি বিজ্ঞানভিত্তিক বই লিখলেন, নাম ‘বিশ্বপরিচয়’। শুধু তা-ই নয়, তিনি বইখানি উৎসর্গ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়কার কৃতি শিক্ষক, উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্র নাথ বসুকে। রবীন্দ্রনাথ তার উৎসর্গপত্রে লিখলেন—
‘বয়স তখন হয়তো বারো হবে, পিতৃদেবের সঙ্গে গিয়েছিলুম ডালহৌসি পাহাড়ে। সমস্ত দিন ঝাঁপানে করে গিয়ে সন্ধ্যাবেলায় পৌঁছতুম ডাকবাংলোয়। তিনি চৌকি আনিয়ে আঙিনায় বসতেন। দেখতে দেখতে গিরিগৃঙ্গের বেড়া দেওয়া নিবিড় নীল আকাশের স্বচ্ছ অন্ধকারে তারাগুলি যেন কাছে নেমে আসত। তিনি আমাকে নক্ষত্র চিনিয়ে দিতেন, গ্রহ চিনিয়ে দিতেন। শুধু চিনিয়ে দেওয়া নয়, সূর্য থেকে তাদের কক্ষচক্রের দূরত্বমাত্রা, প্রদক্ষিণের সময় এবং অন্যান্য বিবরণ আমাকে শুনিয়ে যেতেন। তিনি যা বলে যেতেন তাই মনে করে তখনকার কাঁচা হাতে আমি একটা বড় প্রবন্ধ লিখেছিলুম। স্বাদ পেয়েছিলুম বলে লিখেছিলুম। জীবনে এই আমার প্রথম ধারাবাহিক রচনা, আর সেটা বৈজ্ঞানিক সংবাদ নিয়ে।’
আমি যেমনিভাবে ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ আর ‘প্রাণের প্রাণ জাগিছে তোমারি প্রাণে’—দু’টি সিরিজ একে অপরের পরিপূরক হবে বলে ভাবছিলাম, রবীন্দ্রনাথও কি বিশ্বপরিচয় লিখবার আগে ঠিক তেমন করেই ভাবছিলেন? নয়তো তিনি বলবেন কেন—
‘জ্যোতির্বিজ্ঞান আর প্রাণবিজ্ঞান—কেবলি এই দুই বিষয় নিয়ে আমার মন নাড়াচাড়া করছে’।
কিংবা আইনস্টাইনের মত একাকিত্বের যন্ত্রণা হয়তো রবীন্দ্রনাথও পেয়েছিলেন বিজ্ঞানের নান্দনিক সৌন্দর্যে আবিষ্ট হয়ে, তাই লিখেছিলেন—
‘মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে’।
বিস্ময়ের কথা এই যে, রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক পরিবেশ পরিস্থিতি ধর্মবোধ আর উপনিষদীয় জীবনদৃষ্টির দ্বারা আচ্ছন্ন হলেও সেখানে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রতি কোন বিরূপতা ছিল না, তা আমরা জীবনস্মৃতিতে যথেষ্টই লক্ষ্য করি। এই বিজ্ঞানশিক্ষা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্রকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-বৈজ্ঞানিক করার জন্য নয়। কিন্তু স্বয়ং তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কথা বুঝেছিলেন যে, বিশ্বচরাচরের সৃষ্টি ও গতিশীলতার আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা যাই থাকুক না কেন, তার একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে এবং রবীন্দ্রনাথের মতো বালকের তা জানা দরকার। তাই তিনি ছোট ছেলেকে হিমালয়ে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে প্রোক্টরের জ্যোতির্বিজ্ঞান গ্রন্থ থেকে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি চিনিয়ে দিতেন। বাড়িতে পাঠবস্তুর (স্কুলের পাঠ্যের চেয়ে অনেক বেশি) মধ্যে ছিল অন্যান্য কিছুর সঙ্গে পদার্থবিদ্যা, জ্যামিতি, গণিত। মাঝে মাঝে সীতানাথ দত্ত এসে যন্ত্রতন্ত্রযোগে প্রাকৃতবিজ্ঞান শিক্ষা দিতেন।
এ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘এই শিক্ষাটি আমার কাছে বিশেষ ঔৎসুক্যজনক ছিল। জ্বাল দিবার সময় তাপসংযোগে পাত্রের নীচের জল পাতলা হইয়া উপরে উঠে, উপরের ভারী জল নীচে নামিতে থাকে এবং এই জন্যই জল টগবগ করে- ইহাই যেদিন তিনি কাঁচপাত্রের জলে কাঠের গুঁড়া দিয়া আগুনে চড়িয়ে প্রত্যক্ষ দেখিয়ে দিলেন সেদিনের মধ্য যে কিরূপ বিস্ময় অনুভব করিয়াছিলাম তাহা আজও স্পষ্ট মনে আছে। দুধের মধ্য জল জিনিসটা যে একটা স্বতন্ত্র বস্তু, জ্বাল দিয়ে সেটা বাষ্প-আকারে মুক্তিলাভ করে বলিয়াই দুধ গাঢ় হয়, এ কথাটাও যেদিন স্পষ্ট বুঝিলাম সেদিনও ভারি আনন্দ হইয়াছিল।’
তিনি লেখেন, ‘ইহা ছাড়া, ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুলের একটি ছাত্রের কাছে কোনো এক সময়ে অস্থিবিদ্যা শিখিতে আরম্ভ করিলাম। তার দিয়া জোড়া একটি নরকঙ্কাল কিনিয়া আনিয়া আমাদের ইস্কুলঘরে লটকাইয়া দেওয়া হয়।’ (নানা বিদ্যার আয়োজন, জীবনস্মৃতি)। এছাড়া এই পরিচ্ছেদে গৃহশিক্ষক অঘোর বাবুর মানুষের ছিন্ন কণ্ঠনালী এনে তার মহিমা ব্যাখ্যার, তার সঙ্গে মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে বৃদ্ধার মৃতদেহ, একটি অঙ্গহীন পা এসব দেখে বিচিত্র অনুভূতিতে আলোড়িত হন।
আমরা জানি না, যে ছাত্র স্কুলের সীমানা ডিঙোতে পারেননি, তার প্রথাবদ্ধ বিজ্ঞানশিক্ষা কতদূর এগিয়েছিল। আর এ-ও সত্য যে, বিজ্ঞানশিক্ষা আর বিজ্ঞানবোধ একপথে চলে না। আমাদের উপমহাদেশে পদার্থবিদ্যার পণ্ডিত কপালে ফোঁটাতিলক পরেন, ডাক্তার হাতে ধারণের আংটি পরেন, ইঞ্জিনিয়ার গণকঠাকুরের কাছে ছোটেন—এমন ঘটনার অভাব নেই।
তাই বিজ্ঞানচেতনা আর বিজ্ঞানশিক্ষা পরস্পরের সহগামী না-ও হতে পারে। এটা শুধু উপমহাদেশের বিষয়, তথা নয়, পশ্চিমের উন্নত বিজ্ঞানচর্চার দেশেও কুসংস্কারের ঘাটতি নেই। কিন্তু এ কথাও ঠিক যে, উনিশ শতকে তিনি যেমন ওগুস্ত কোঁতের পজিটিভিস্ট চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, তেমনই পরবর্তী জীবনে বিজ্ঞানের গ্রন্থ ছিল রবীন্দ্রনাথের অবশ্যপাঠ্য। জীবনস্মৃতিতেই জানাচ্ছেন, ‘একুশ বছর বয়সে সদর স্ট্রিটের বাড়িতে থাকার সময় বিজ্ঞান পড়িবার জন্য আমার অন্তত একটা আগ্রহ উপস্থিত হইয়াছিল। তখন হক্সলির রচনা হইতে জীবতত্ত্ব ও লকইয়ার, নিউকোম্ব প্রভৃতির গ্রন্থ হইতে জ্যোতির্বিদ্যা নিবিষ্ট চিত্তে পাঠ করিতাম।’ আমরা জানি, এ আগ্রহ যে তার কখনো শিথিল হয়েছিল তার প্রমাণ নেই। তা না হলে আমরা তাঁর এ জীবনে বিশ্বপরিচয়ের মতো গ্রন্থ হাতে পেতাম না।
আইনস্টাইনের সাথে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয় ১৯২৬ সালে, কবিগুরুর দ্বিতীয়বার জার্মানি ভ্রমণের সময়। এই প্রথম সাক্ষাৎকারের অবশ্য কোন লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে এটি নিশ্চিত যে, রবিঠাকুরের সান্নিধ্য আইনস্টাইনের মনে যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধের জন্ম দিয়েছিলো। সেজন্যই আইনস্টাইন পরে চিঠি লিখে কবিগুরুকে জানিয়েছেন।
‘জার্মানিতে যদি এমন কিছু থাকে যা আমি আপনার জন্য করতে পারি, তবে যখন খুশি দয়া করে আমাকে আদেশ করবেন।’ আইনস্টাইনের মত জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীর কাছ থেকে প্রথম সাক্ষাতেই এমন চিঠি পাওয়া চাট্টিখানি ঘটনা নয়। তবে আইনস্টাইনের সাথে কবির ‘সত্যিকারের’ যোগাযোগ হয় এর বছর চারেক পরে- ১৯৩০ সালে। সে সময় আইনস্টাইনের সাথে কবিগুরুর অন্তত চারবার দেখা হয়। ১৪ জুলাই তারিখে আইনস্টাইনের সঙ্গে তার কথাবার্তার বিবরণ ‘রিলিজিয়ন অব ম্যান’ বইয়ের পরিশিষ্টে ছাপা হয়। জীবনের গভীরতম দর্শন, জীবন-জিজ্ঞাসা নিয়ে তাঁরা সেদিন বিস্তারিত আলোচনা করেন। যারা উৎসাহী এবং মুক্ত-মনায় বিশ্বাসী দিমিত্রি মারিয়ানফের সাক্ষাৎকারের বিবরণটি (১০ আগাস্ট ১৯৩০ সালের নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত) তাদের কাছে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
আইনস্টাইনের আস্থা ছিলো পর্যবেক্ষণ অনপেক্ষ ভৌত বাস্তবতায়। তিনি বিশ্বাস করতেন না মানুষের পর্যবেক্ষণের উপর কখনো ভৌতবাস্তবতার সভ্যতা নির্ভরশীল হতে পারে। বোর প্রদত্ত কোয়ান্টাম বলবিদ্যার কোপেনহেগেনীয় ব্যাখ্যার সাথে তার বিরোধ ছিল মূলত এখানেই। বোর বলতেন, ‘পদার্থবিজ্ঞানে কাজ প্রকৃতি কেমন? তা আবিষ্কার করা নয়, প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা কি বলতে পারি আর কিভাবে বলতে পারি, এটা বের করাই বিজ্ঞানের কাজ। এই ধারণাকে পাকাপোক্ত করতে গিয়ে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আরেক দিকপাল হাইজেনবার্গ দেখিয়েছিলেন যে, একটি কণার অবস্থান এবং বেগ যুগপৎ নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা অসম্ভব। অবস্থান সুচারুভাবে মাপতে গেলে কণাটির বেগের তথ্য হারিয়ে যাবে, আবার বেগ খুব সঠিকভাবে মাপতে গেলে অবস্থান নির্ণয়ে গণ্ডগোল দেখা দেবে।
নীলস বোরের মতে, যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি কণাকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কণাটি কোথায় রয়েছে- এটা বলার কোন অর্থ হয় না। কারণ এটি বিরাজ করে সম্ভাবনার এক অস্পষ্ট বলয়ে। অর্থাৎ এই মত অনুযায়ী ভৌত বাস্তবতা মানব-পর্যবেক্ষণ নিরপেক্ষ নয় (১৯৮২ সালে অ্যালেইন অ্যাপেক্ট আইনস্টাইনের ই.পি.আর মানস পরীক্ষাকে পূর্ণতা দান করেন একটি ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে, যা কিন্তু বোরের যুক্তিকেই সমর্থন করে)। বলা বাহুল্য, আইনস্টাইন এ ধরনের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘যখন আমাদের মহাবিশ্ব মানুষের সাথে ঐকতানে বিরাজ করে তখন শাশ্বত, যাকে আমরা সত্য বলে জানি, হয়ে দাঁড়ায় সৌন্দর্য, আমাদের অনুভূতিতে। এছাড়া অন্যকোন ধারণা থাকতে পারে না। এই জগৎ বস্তুত মানবীয় জগৎ- এর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিও হল বিজ্ঞানী মানুষের দৃষ্টি। সুতরাং, আমাদের ছাড়া বিশ্ব জগতের অস্তিত্ব নেই; এটি হল আপেক্ষিক জগৎ, যার বাস্তবতা আমাদের চেতনার ওপর নির্ভরশীল।’
যুক্তি ও আনন্দভোগের কতিপয় প্রামাণ্য রয়েছে যার মাধ্যমে সত্য উদঘাটিত হয়; এই সত্যই হলো শাশ্বত মানুষের প্রামাণ্য যার অভিজ্ঞতা পুঞ্জিভুত হচ্ছে আমাদের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই। তিনি আরও বলেন, ‘এক শাশ্বত সত্তা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে আবেগ ও কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে। আমাদের সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে যে মহামানবের কোন স্বাতন্ত্র নেই সেটি সত্যের নৈর্ব্যক্তিক মানবীয় জগৎ। ধর্ম এসব সত্যের উপলব্ধি করে এবং আমাদের গভীরতম কামনার সাথে সংযোগ স্থাপন করে; সত্য সম্পর্কে আমাদের ব্যক্তি চেতনা বিশ্বজনীন তাৎপর্য অর্জন করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, তার বিজ্ঞানশিক্ষা বা বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাস যাই হোক, এক অভাবিত বিজ্ঞানবোধ তাঁর মনন ও কল্পনা উভয়কেই আচ্ছন্ন করেছিল। তার একটি উপাদান হলো এই বিশ্বজগৎ সম্বন্ধে তার ধারণা। খুব অল্পবয়সেই এই অস্তিত্বের বিশাল পরিসর সম্বন্ধে তার ধারণা ছিল, গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান বুঝে উদ্ভাসিত হয়ে ‘আকাশভরা সূর্যতারা বিশ্বভরা প্রাণ’ সম্বন্ধে তার একটি বোধ তৈরি হয়েছিল। এই বোধ তার কবিত্বকে সমৃদ্ধ করেছে, কারণ এর উৎস বিজ্ঞান হলেও এর মধ্যে জন্ম দিয়েছে এমন এক বিস্ময়, যা তাকে দিয়ে বলিয়েছে, ‘বিস্ময়ে তাই জাগে আমার হৃদয়ে মানবের জয় বিজ্ঞানের জয় জয়াকার’।
সহায়ক গ্রন্থাবলি
১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিক্ষার বাহন
২. প্রাগুক্ত, শিক্ষার সাঙ্গীকরণ
৩. প্রাগুক্ত, শিক্ষার হেরফের
৪. প্রাগুক্ত, গ্রহগণ জীবের আবাসভূমি
৫. প্রাগুক্ত, বিশ্বপরিচয়
৬. প্রাগুক্ত, জীবনস্মৃতি
৭. শ্রী সুনীল চন্দ্র সরকার, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন ও সাধনা
৮. Rabindranath Tagore, The Religion of Men
৯. Bertrand Russell, The History of Western Philosophy
১০. Ibid, Why I am not a Christion
১১. Lester E. Denomn and Robert E. Egner, Bertrand Russell
১২. The Enclopedia of Philosphy
১৩. John Dewey, Democracy and Education
১৪. Plato, The Republic
১৫. Aristitle, The Politics