শীর্ষ খবর
উপাচার্যের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয় আসল কাজই ভুলে গেছেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেছেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা এখন প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়ে নিজে যে একজন শিক্ষক, সে পরিচয় ভুলে যান। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক। কিন্তু কোনো কোনো উপাচার্যের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল কাজ কী তা তারা ভুলে গেছেন।’
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে এসে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু জ্ঞান দেওয়া ও দান করা নয়; বরং বর্ধিত জ্ঞান কাজে লাগানোই আসল কাজ। গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক কাজ। কিন্তু শিক্ষকদের গবেষণা নিয়েও এখন নানা কথা উঠে। অনেক বিভাগে এখন সহকারী অধ্যাপকের চেয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা বেশি।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মনে রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয় চলে জনগণের টাকায়। সুতরাং এর জবাবদিহিতাও জনগণের কাছে। উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টার্জিত টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলে। তাই প্রতিটি টাকা সৎ ও সঠিক পথে ব্যয় করার দায় উপাচার্য ও শিক্ষকদের।’
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং ও ডিপ্লোমা কোর্সের সমালোচনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নিয়মিত কোর্সের চেয়ে বাণিজ্যিক কোর্সের মাধ্যমে প্রতিবছর বেশি গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। এসব ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছে? তবে শিক্ষকরা কিন্তু ঠিকই লাভবান হচ্ছে। তারা নিয়মিত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি সার্বিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে পাবলিক, রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এখন মেলায় পরিণত হয়েছে; যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। কিছু শিক্ষক নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন; কিন্তু ইভিনিং কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্সে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। কারণ এগুলোতে নগদ অর্থ থাকে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আপনাদের যে ইভিনিং শিফ্ট, এটা আমার কাছে ভালো লাগে না। এই ইভিনিং শিফ্টের জন্য সন্ধ্যার পরে ক্যাম্পাসে আর কোনও পরিবেশ থাকে না। আমি শুনেছি, এখানে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সাবজেক্টে ২২টি কোর্স আছে। প্রতিটি কোর্সের জন্য সাড়ে ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। তাহলে ২২টি কোর্সে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো পড়ে। এর অর্ধেক শিক্ষকরা পান, আর অর্ধেক ডিপার্টমেন্ট পায়। ডিপার্টমেন্টের টাকা কী হয় জানি না। আমি এটাও জানি, যারা নাকি ডক্টরেট করা সিনিয়র শিক্ষক তারাই ক্লাস নেন। এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলবো না। আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন।’