খোলা জানালা
কলুষিত রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন অতি জরুরি
মাহবুব আহমদ রুমন
রাজনীতি মানুষের জন্য এ কথা এখন মানতে নারাজ বর্তমান প্রজন্ম।স্বপক্ষে তাদের অনেক যুক্তি। যা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। একসময় ঝাঁকে ঝাঁকে তরুণ-তরুণী মেবাধী ছাত্র-ছাত্রী রাজনীতিতে আসতেন। তাদের মাঝ থেকে তৈরি হতো অনেক সৃষ্টিশীল-প্রতিশ্রুতিশীল রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী। কালের বিবর্তনে সেই অতীত ঐতিহ্য আজ আর নেই।এখনকার প্রজন্মের মুখে মুখে আই হেট পলিটিক্স ।এই অতিষ্ঠতা তাদের মাঝে একদিনে সৃষ্টি হয়নি।
শিক্ষিত প্রজন্ম চায় নতুন কিছু। চায় তারা রাজনীতির সুন্দর ধারা। গঠনমূলক সমালোচনা। চায় না হানাহানি-রেষারেষি-কাঁদা ছুড়াছুঁড়ি। নোংরা অকথ্য ভাষার গালিগালাজ। চায় সম্প্রীতির বন্ধন,পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সৌহার্দপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ। এমন পরিবেশ সৃষ্টি হলে আজ যারা বলছে আই হেট পলিটিক্স তারা কাল বলবে,আই লাভ পলিটিক্স।
এজন্য নিশ্চিত করতে হবে সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ।বিবেকবর্জিত নোংরামি পরিহার করতে হবে।হতে হবে সহনশীল।গঠনমূলক সমালোচনা শুনে শুধরাতে হবে।ঘুণে ধরা পচনশীল রাজনৈতিক ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।কলুষিত রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন অতি জরুরি। কলুষিত রাজনীতির ধারা পরিহার করে রাজনীতিবিমুখ বর্তমান প্রজন্মকে রাজনীতিমুখী করে সুখি সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রচেষ্টা এখন থেকেই শুরু করতে হবে।
সর্বত্র এখন দুর্নীতিময়।আগে নেতা-মন্ত্রী-এম.পি’রা ছিলেন জনতার কাছাকাছি।আর এখন তারা জনতা থেকে যোজন-যোজন দূরে।প্রতিটি ক্ষেত্রে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব।ক্ষমতা পেয়ে মন্ত্রী-এমপি,নেতারা বেহুশ।ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে গেছেন।যেদিকে দৃষ্টি যায় সেদিকেই দুর্নীতি।মুখে দেশকে সিঙ্গাপুর,ব্যাংকক,ইউরোপ,আমেরিকার সাথে তুলনা করে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই।মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষরা পাচ্ছেন না চিকিৎসাসেবা।ভেন্টিলেটর,অক্সিজেন,আইসিইউ’র অভাবে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছেন বহু মানুষ।ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যখাত।বড় বড় নেতা-এম.পি’রা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে কিংবা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
কথার সাথে কাজের কোনো মিল না থাকলেও তারা কথার তুবড়ি ফুটাতেই থাকেন।সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তাদের চোখে পড়ে না।কর্ণগোচর হয় না।প্রতিনিয়ত তরুণীরা ধর্ষিত হয়ে লাশে পরিণত হচ্ছে।আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে।
অন্ধ-বধির নেতা মন্ত্রীরা চালিয়েই যাচ্ছেন চাপাবাজির রাজনীতি।আর রোপণ করছেন প্রতিহিংসার বিষবৃক্ষ।সহনশীল শ্রদ্ধার রাজনীতি আজ বহুদূর!
মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে নিয়ে প্রতিনিয়ত করা হয় অযাচিত,অশোভন,বিবেকবর্জিত,তীর্যক বিষোদাগার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী,গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় দুই বছরের অধিক সময় কারাভোগ করতে হয়।দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড.মুহম্মদ ইউনূসকে দাঁড়াতে হয় আদালতের কাঁঠগড়ায়।দেশের অর্থনীতির ভিত রচনাকারী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও ভাষা সৈনিক,বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম হান্নান শাহ’র কপালে জুটেনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন।সরকারের তরফ থেকে করা হয়নি কোনো প্রকার শোক প্রকাশ।বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ,রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড.পিয়াস করিমের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাদের লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যেতে বাঁধা প্রদান করা হয়।বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ারের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় করা হয় ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ।দেশপ্রেমিক ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত মহামারি করোনা ভাইরাস সনাক্তের কীট ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়নি সরকারের তরফ থেকে।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির পর মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস প্রকাশ করা হয়।এখানেই শেষ নয় তার কবরে হামলা করে ছাত্রলীগ।
আ’লীগের নেতা মন্ত্রীদের মৃত্যুর পর বিএনপির তরফ থেকে সহানুভূতি শোক প্রকাশ করে ইতিবাচক রাজনীতির স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি করা হলেও বিএনপি নেতা,সাবেক এম.পি-মন্ত্রীদের মৃত্যুর পর ঠিক উল্টো আচরণ করা হয় আওয়ামী লীগের তরফ থেকে।
আওয়ামী লীগের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম,সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত,মো.নাসিম,সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়া বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের নেতিবাচক মন্তব্যে ভরপুর হয়ে উঠে।এটাই তাদের কর্মফল।সুতরাং এ থেকে জীবিতদের শিক্ষা নেয়া উচিত।
দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, কলুষিত প্রতিহিংসার দুর্গন্ধময় রাজনীতিকে পিছনে ফেলে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় প্রিয় স্বদেশে প্রবর্তিত হোক ইতিবাচক রাজনীতির সুস্থ ধারা।
লেখকঃ কথাসাহিত্যিক ও সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রদল।