শীর্ষ খবর
অবশেষে চার-লেনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে সিলেটবাসীর : শুরু হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ
অবশেষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নেই ঢাকা-সিলেটের ২১৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার চার লেন নির্মাণ করছে সরকার।
এর আগে মেগা এ প্রকল্প নির্মাণে উন্নয়ন সহযোগীর সন্ধানে ছিল সরকার। এরপর এডিবি তাদের তিন বছরের যে পরিকল্পনা করে, তাতে ঠাঁই পেয়েছে ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্প। অবশ্য দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্পের আওতায় ২১০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে চিঠি দিয়েছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ৮৫ টাকা দরে এ অর্থ প্রায় ১৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
ওই প্রকল্পে ঋণ দিতে একমত বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এডিবি। তাদের কাছ থেকে এখন আর কোনো ঝামেলা নেই। চলতি বছরেই ঋণচুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে। কারণ এখনও প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব) চূড়ান্ত হয়নি।
গত বুধবার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেট জোনের উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত ভার্চুয়াল সভায়ও সড়ক, পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের কাজ দ্রুত শুরুর তাগিদ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এই মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ নানা কারণে শুরু করতে বিলম্ব হয়। তবে এবার সকল বাঁধা কেটে গেছে। এডিবির অর্থায়নে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত হবে। ইতোমধ্যে এডিবি অর্থায়ন চুড়ান্ত করেছে। চলমান রিটেইল ডিজাইন এবং ডিপিপি প্রণয়নের কাজ দ্রুততার সাথে শেষ করতে হবে। পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে নিতে হবে, যাতে আর কোন বিলম্ব না হয়। মন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পটি সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি। কথা দিয়েছি, নানা কারণে কথা রাখতে পারিনি। তবে এবার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। আশাকরি সময়মত কাজটি শুরু করবেন এবং শেষ করবেন।
প্রকল্পে সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মিত হবে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাঁক সরলীকরণসহ অধিকমাত্রার ট্রাফিক বিবেচনায় এনে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগ নিশ্চিত করা হবে। শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে এশিয়া হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) করিডোর, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চারলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
প্রকল্পের আওতায় পৃথক সার্ভিস লেনসহ সড়ক নির্মাণে অতিরিক্ত ৯৮৬ দশমিক ৪৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর জন্য মোট ব্যয় হবে চার হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ইউটিলিটিও স্থানান্তর করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৩২১টি আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। কালভার্টগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় এক হাজার ৩৮১ মিটার। ছোট-বড় ৭০টি ব্রিজসহ থাকবে। থাকবে পাঁচটি রেলওয়ে ওভারপাস।
নতুন পরিকল্পনায় চারটি ফ্লাইওভার, ১০টি আন্ডারপাস, ৪২টি ফুটওভার ব্রিজ, তিনটি ট্রাক স্ট্যান্ড এবং দুটি রেস্টহাউস থাকবে সড়কটিতে। সিলেট চা উৎপাদনে ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। বর্তমানে এখানে বড় বড় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। সিলেটে রয়েছে বেশ কয়েকটি সিমেন্ট ও সার কারখানাও। সিলেটের পাথর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ প্রচুর তেল ও গ্যাসের খনি রয়েছে। এসব কারণে এডিবি অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে চারলেন। সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজ করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।