আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবর
ফ্রান্সের নির্লজ্জতায় উত্তাল গোটা বিশ্ব
ফ্রান্সের একাধিক সরকারি ভবনে বড় করে মহানবী (স)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করায় ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলিমরা। প্রিয় নবীকে অপমানের জেরে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল প্রতিবাদ। কালের পরিক্রমায় মুসলিম দেশ ও সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ তৈরি হলেও ইসলাম ধর্মানুসারীদের প্রতি ফ্রান্সের সাম্প্রতিক আচরণের বিরুদ্ধে একসঙ্গে সরব হয়েছে সবাই।
গত শুক্রবার ফ্রান্সের কয়েকটি সরকারি ভবনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এর আগে, চলতি মাসের শুরুর দিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসলামকে সংকটাপন্ন ধর্ম বলে বর্ণনা করেন।
দেশটির এমন আচরণে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে মুসলিমদের মধ্যে। কুয়েত, কাতার, মিসর, আলজেরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব, তুরস্ক তো বটেই, ম্যাক্রোঁর সমালোচনা করেছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যও।
গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চলছে ফ্রান্স ও ম্যাক্রোঁবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা। ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক রীতিমতো ভাইরাল। অনেক দেশেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। মুখ খুলেছেন মুসলিম দেশের নেতারাও।
গত রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ফরাসি প্রেসিডেন্টকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন। সবধরনের ফরাসি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ফ্রান্সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর কার্টুন প্রদর্শন ও মুসলিমবিরোধী অবস্থানের ঘটনায় মঙ্গলবার ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসলামবিরোধী অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, মুসলিমদের অবমাননা করা সুবিধাবাদী বাক-স্বাধীনতার অপব্যবহারের শামিল।
ম্যাক্রোঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে গত সোমবার ইসলামাবাদে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
এছাড়া পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মাক জুকারবার্গের কাছে লেখা এক চিঠিতে ইসলামবিদ্বেষী সবধরনের পোস্ট নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি।
ইসলাম অবমাননার প্রতিবাদে রোববার তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়াতে। এসময় ফরাসি প্রেসিডেন্টের ছবি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভ হয়েছে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে। সেখানেও বিক্ষোভকারীরা ফ্রান্সের পতাকা ও ম্যাক্রোঁর ছবিতে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
প্রতিবাদ থেকে বাদ পড়েনি ইসরায়েলি নিপীড়নের শিকার ফিলিস্তিনও। গাজা উপত্যকায় ফরাসি প্রেসিডেন্টের ছবি পুড়িয়ে ইসলাম ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। পাশাপাশি, ম্যাঁক্রোর ইসলামবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাস।
মুসলিমদের প্রাণপ্রিয় নবীকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান’-এর নিন্দা জানিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ।
ইরাকে রাবা আল্লাহ নামে একটি দল এক বিবৃতিতে বলেছে, ফ্রান্সের কর্মকাণ্ডে বিশ্বের দেড়শ’ কোটি মুসলিম অপমানিত হয়েছে। দলটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তাদের সদস্যরা প্রয়োজনে যেকোনও সময় যেকোনও জায়গায় প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত রয়েছে।
মহানবী (স)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মরক্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জর্ডানের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ আল খালায়লেহ বলেছেন, নবীর অপমান কোনও ব্যক্তি স্বাধীনতার ইস্যু নয়, এটি সহিংসতা উসকে দেয়ার মতো অপরাধ।
মঙ্গলবার প্রতিবাদ জানিয়েছে মহানবী (স)-এর জন্মস্থান সৌদি আরব। নবী কারীম (স)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন এবং ইসলামকে সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত করার অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশটি।
নিজ দেশেও সমালোচনার শিকার হচ্ছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ। দেশটির বামপন্থী আনবাওড ফ্রান্স পার্টির প্রধান ও সংসদ সদস্য জ্যঁ-লিক মেল্যঁশ বলেছেন, ‘ম্যাক্রোঁ পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন। এরদোয়ানের বিবৃতিতে ফ্রান্সকে অবজ্ঞা, লাঞ্ছিত ও উপহাস করা হয়েছে। ম্যাক্রোঁর পরিকল্পনা কী? টুইট ছাড়া আর কী করার পরিকল্পনা করছেন তিনি?’
অবশ্য ইউরোপীয় কমিউনিটিতে বেশ কিছু সমর্থককে পাশে পাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতির প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, এরদোয়ানের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য। তুরস্ককে ‘সংঘাতের এই বিপজ্জনক প্যাচ’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সমালোচনার মধ্যে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসও ম্যাক্রোঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। গত রোববার তিনি বলেছেন, ফ্রান্সকে লক্ষ্য করে তুর্কি নেতৃত্বের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো ধর্মীয় বিদ্বেষ বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সূত্র: আল জাজিরা