সারা বাংলা

মরুভুমির মিষ্টি ফল ত্বীনের চাষ বাড়ছে বাংলাদেশে

পবিত্র আল কোরআনে উল্লেখ করা মরুভুমির মিষ্টি ফল আত ত্বীনের চাষ বাড়ছে বাংলাদেশে। লাভ বেশি এবং দিনকে দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে চাষের আগ্রহও।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে এই ফল চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন বারতোপা এলাকার আজম তালুকদার।

শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা গ্রামে ‘মডার্ণ এগ্রো ফার্ম এন্ড নিউট্রিশন’ নামের ফার্মে এই ত্বীন ফলের চাষ হচ্ছে।

জানা গেছে, এটি আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় ত্বীন ফলের বাগান। এই ফল চাষে ব্যাপক সফলতা দেখে দেশের অনেকেই এখন আত ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

শ্রীপুরের এই ফার্ম থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে ত্বীন ফল ও এর চারা। দিনদিন চাহিদা বাড়ার কারণে কর্তৃপক্ষ ফার্মটির সম্প্রসারণ করে এই ফলগাছের চারা উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ব্যবস্থাপক পারভেজ আলম বাবু জানান, বারতোপা এলাকায় ৭ বিঘা জমিতে ত্বীন ফলের চাষ করা হয়েছে।

মাদার প্ল্যান্ট (মুল গাছ) থেকে তৈরি করা কলমের ৩ মাস বয়স থেকে ফল দেয়া শুরু করে। ফল ধরার ১ সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। প্রতিটি গাছে ন্যুনতম ৭০ থেকে ৮০টি ফল ধরে।

সারা বছরই গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছ ছয় থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। খোলা মাঠ ছাড়াও টবের মধ্যে ছাদবাগানে ত্বীন চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। ছাদ বাগানের চাষীদের মধ্যেও এর ব্যাপক চাহিদা দেখা গেছে।

ত্বীণ ফল ও গাছের ব্যাপক চাহিদার কারণে ৭টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফার্ম কর্তৃপক্ষ। এখান থেকে কলম তৈরি করে এর নিজেদের প্ল্যান্ট ছাড়াও চাষিদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফল বিক্রেতাসহ ভোজন রসিকরা এখান থেকে ত্বীন কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ কেজি ত্বীন ফল বিক্রি হচ্ছে। যার প্রতিকেজির মূল্য ১ হাজার টাকা।

ফলের পাশাপাশি সৌখিন চাষিরা এখান থেকে চারাও কিনে নিচ্ছেন। দুইমাস বয়সী চারার পাইকারি মূল্য ৫২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৭২০ টাকা। এখান থেকে প্রতি মাসে দুই হাজার চারা বিক্রি হচ্ছে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় টবসহ ফল ধরা চারা বিক্রি হচ্ছে। ত্বীন গাছে রোগ-জীবাণু সংক্রমণের মাত্রা একদমই কম।

সৌদি আরব ও বাংলাদেশ এই ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত। ডুমুর জাতীয় এ ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Ficus carica ও পরিবারের নাম moraceae. ফলটি পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও মিষ্টি হয়ে ওঠে বলে জানান পারভেজ আলম বাবু।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মো. আজম তালুকদার জানান, ২০১৪-২০১৫ সালে তিনি থাইল্যন্ড থেকে জীবন্ত গাছ এবং তুরস্ক থেকে ত্বীন গাছের কাটিং নিয়ে আসেন। পরে নিজস্ব প্রোপাগেশন সেন্টারে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আদ্রতা বজায় রেখে বারতোপা এলাকায় ২০১৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন ও আবাদ শুরু করা হয়। প্রতিটি গাছে প্রথম বছরে এক কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭/১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫/৪০কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। এভাবে ক্রমবর্ধিত হারে একটানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দিতে থাকে।

গাছটির আয়ু হলো প্রায় ১০০ বছর। তিন মাসের মধ্যেই শতভাগ ফলন আসে। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ডুমুর আকৃতির এই ফল সবার দৃষ্টি কেড়েছে। প্রতিটি পাতার গোড়ায় গোড়ায় ত্বীন ফল জন্মে থাকে। ত্বীন একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল, যা মরু অঞ্চলে স্বাচ্ছন্দ্যে জন্মায়। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন। ত্বীন কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই, মাটিতে জৈব ও কম্পোজড সার মিশিয়ে রোদে মাঠে ও ছাদে টবে লাগিয়ে ফল উৎপাদনে সাফল্য পাওয়া গেছে। তাই ছাদবাগানীদের মধ্যে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

আরও সংবাদ

আরও দেখুন

Close
Close