আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবর
দেশ ছেড়েছেন আশরাফ গণি : সরকার গঠনের দ্বারপ্রান্তে তালেবান
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশের মধ্য দিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখলের দ্বারপ্রান্তে তালেবান। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ‘শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর’ করতে চাইছে দেশটির সরকার। আজ রোববার আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
কাবুল পরিস্থিতি নিয়ে আফগানিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল টোলো টিভিতে প্রচারিত এক ভিডিও বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আফগান জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই…কাবুলে কোনো হামলার ঘটনা ঘটবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ‘শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর’ করা হবে।
রাজধানী শহরটিতে কোনো ধরনের সংঘাত চাচ্ছেন না তালেবান নেতারাও। কাবুলে এই মুহূর্তে অবস্থান করছেন আল-জাজিরার সাংবাদিক চার্লট বেলিস। তালেবানের সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তালেবান নেতারা সবাইকে শান্ত থাকার জন্য বলেছেন। তাঁরা শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছেন।
এদিকে, কয়েক দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে বলে আশা করছে তালেবান। বাহিনীর একজন মুখপাত্র সুহাইল শাহিন আজ রোববার জানান, বাহিনীটির কিছু সদস্য এরই মধ্যে রাজধানী কাবুলে পৌঁছে গেছেন। আর এতে তাঁদের তেমন বেগ পেতে হয়নি।
মুখপাত্র আরও বলেন, তাঁরা নারী অধিকার রক্ষার পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মী ও কূটনীতিকদের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করবেন।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুহাইল শাহিন বলেন, ‘আমরা লোকজনকে, বিশেষ করে কাবুলের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে তাদের জীবন ও সম্পদ নিরাপদ থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নেতাদের পক্ষ থেকে বাহিনীকে কাবুল শহরে না ঢুকে দোরগোড়ায় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছি।’ আর এটা কয়েক দিনের মধ্যেই হবে বলে আশা তাঁদের।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে তালেবান বাহিনী। পাশাপাশি রাজধানীতে ঢুকতেও শুরু তারা। এই পরিস্থিতিতে ধ্বংসযজ্ঞ এড়াতে ‘শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের’ আলোচনা শুরু হয়েছে তালেবান ও গণি সরকারের মধ্যে। ইতোমধ্যে গণি পদত্যাগ করেছেন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তান যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে রাজধানী কাবুল ছেড়েছেন তিনি। আজ রোববার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ কথা জানিয়েছে।
তালেবানের দখলে থাকা আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে গতকাল শনিবার হাজারো সেনা গর্ভনর দপ্তরে জড়ো হয়েছিলেন। তবে তাঁরা তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নয়, উল্টো ক্ষমা চাইতে জড়ো হন।
দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাত–কে গত বৃহস্পতিবার দখল করে তালেবান। এরপর সেখানকার অন্যতম স্থানীয় কমান্ডার ইসমাইল খানকে আটক করে তালেবান। গত জুলাইয়ে হেরাতে যখন লড়াই তীব্র আকার ধারণ করে, তখন সম্মুখসমরে অংশ নেন এ আফগান কমান্ডার। তাঁকে ‘লায়ন অব হেরাত’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
একে একে তালেবানের হাতে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের পতনের পর দেশটির সরকারি বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সহিংস হামলার ভয় বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় হেরাতের আফগান সেনারা গতকাল একত্র হয়ে ক্ষমা চান। তাঁদের প্রায় সবাই ছিলেন সাধারণ পোশাকে।