বিয়ানীবাজারে লোলা গাঙ ও বাবুর খাল রক্ষায় মানববন্ধন

‘মানুষের লোভের কারণে বিয়ানীবাজারের লোলা গাঙ ও বাবুর খাল নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। বিয়ানীবাজার পৌরসভা বাবুর খালের উৎসমুখ দখল করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করেছে। ফলে প্রতি বর্ষায় মাথিউরা ও তিলপাড়া ইউনিয়নে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। খোদ পৌরসভা নদী ও খাল দখল করে বাস টার্মিনাল নির্মাণ করছে, যা আমাদের অবাক করেছে। দেখে মনে হচ্ছে এখানে নদী ও খালের অন্যান্য অংশ দখল করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।’

মঙ্গলবার (১ মার্চ) বেলা ১টায় সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার লাসাইতলায় লোলা গাঙ ও বাবুর খাল অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবিতে নবনির্মিত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিয়ানীবাজারের সর্বস্তরের জনসাধারণ আয়োজিত মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা এসব কথা বলেন।

স্থানীয় সংগঠক আজিজুর রহমান সেলিমের সভাপতিত্বে ও কামাল আহমেদ মতরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসুচিতে মূল বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম।

তিনি বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বিয়ানীবাজার উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও বিয়ানীবাজার পৌরসভা ভেতর দিয়ে প্রবাহিত লোলা নদীর অনেকাংশ দখল করে রেখেছে। মাটিজুড়া গাঙ ও জমিদার খালের মতো লোলা গাঙ হারিয়ে যেতে বসেছে। শুষ্ক মৌসুমে এই নদীতে পানির কোনো চিহ্ন থাকে না বললেই চলে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ এই নদী খননের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছিল। পরবর্তীতে নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও একটি প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের নামে চিরাচরিত উপায়ে করা দুর্নীতিতে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

কিম বলেন, দখলদারদের হাত থেকে যেখানে নদী উদ্ধার করার কথা, সেখানে বিয়ানীবাজার পৌরসভা বাবুর খাল দখল করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করে এই খালটিকেও নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এই অপকর্মের বিরুদ্ধে এখনই প্রতিরোধ গড়ে না তুললে বিয়ানীবাজার উপজেলাকে ভবিষ্যতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তাই অবিলম্বে বাবুর খালের উৎসমুখ থেকে দখল উচ্ছেদ ও লোলা গাঙ খনন করার দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখা ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার।

মানববন্ধনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাপা সিলেট শাখার যুগ্ম-সম্পাদক ছামির মাহমুদ বলেন, নদী ও খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত রাখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের হলেও বিয়ানীবাজারের প্রশাসন সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী দেশের নদ-নদী রক্ষার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে স্থানীয় প্রশাসন সে নির্দেশনার অবজ্ঞা করছে। বিয়ানীবাজারের প্রশাসন নদী ও খাল রক্ষার চেষ্টা না করে দখলদারদের সুযোগ করে দিচ্ছে। যা এই অঞ্চলের ইকো সিস্টেম নষ্ট করছে। তাই অবিলম্বে বাবুর খালের উৎসমুখ থেকে দখল উচ্ছেদ ও লোলা গাঙ বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে খনন করতে হবে।

মানববন্ধন চলাকালে সংহতি জানিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, দুষ্কাল প্রতিরোধ আন্দোলনের সংগঠক ও ইমজা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দেবু, ইমজা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সজল ছত্রী ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক ইয়াহইয়া মারুফ। স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য দেন, আরবাব হোসেন খান, দেলওয়ার হোসেন, ছফর উদ্দিন, ইউপি সদস্য আকবর হোসেন প্রমুখ।