শীর্ষ খবর

একজন আবুল মাল আবদুল মুহিত

বর্ণাঢ্য জীবনের এক মানুষ আবুল মাল আবদুল মুহিত। বার্ধক্যজনিত নানা রোগের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর মধ্য দিয়ে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো। তার জীবনের অধ্যায়জুড়ে ছিল মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নিরলস পরিশ্রমের গল্প।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুহিতের মৃত্যুর পর শোকে বিহ্বল তার স্বজন, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

১৯৩৪ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মুহিত। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করার পর অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডে উচ্চশিক্ষা নেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর তৎকালীন পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।২০০৯ হতে ২০১৮ পর্যন্ত দুই মেয়াদে তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মোট এগারোবার ও টানা নয়বার বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণার রেকর্ড রয়েছে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত থাকার সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠন করেন। এ কারণে তাকে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রদান করা হয়।

এক নজরে মুহিত

১৯৩৪ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মুহিত। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজের দ্বিতীয় ছেলে মুহিত। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করার পর অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডে উচ্চশিক্ষা নেন মুহিত। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো, মুহিত তখন ওয়াশিংটন দূতাবাসে কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন। জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন তিনি।

১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হন মুহিত। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’ কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডি-তে।

১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। দীর্ঘদিন বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি পান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার কাঁধেই রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোট ১২ বার ও টানা ১০ বার বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণা করার রেকর্ড গড়েন মুহিত।

মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনীতি নিয়ে ৩০টির অধিক বই লিখেছেন মুহিত। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মুহিতকে ২০১৬ সালের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কারে’ ভূষিত করে সরকার।

আরও সংবাদ

Close