প্রবাসশীর্ষ খবর

লন্ডনে শহীদ মিনারে মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত গাফফার চৌধুরী

লন্ডন থেকে ইশমাম আহমেদ নুহাশ: যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন একুশের গানের রচয়িতা, কিংবদন্তী সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ফুল আর চোখের জলে প্রবাসী বাঙালীরা শেষ বিদায় জানিয়েছেন তাকে। শুক্রবার বাদ জুমআ পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার ছেলে অনুপম চৌধুরী সমবেত মুসল্লীদের কাছে তার বাবার আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া কামনা করেন।

পরে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে। গাফফার চৌধুরী ভক্তরা দলে দলে ছুটতে থাকেন শহীদ মিনার অভিমূখে। এসময় ব্রিকলেন সড়কটি অনেকটা গাড়ী চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। গাফফার চৌধুরীর মরদেহ সরাসরি নিয়ে রাখা হয় আলতাব আলী পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বেদীতে। একুশের কালজয়ী গানের রচয়িতা প্রিয় এই সাংবাদিককে শেষবারের মত দেখতে এসময় সমবেত লোকজন অনেকটা বিশৃঙ্খল হয়ে উঠেন। প্রাইভেট সিকিওরিটিও যখন শৃংঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছিলো, তখন একপর্যায়ে লন্ডন পুলিশকে এসে নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়। এক শোকার্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয় শহীদ মিনারে। 

সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ছেলে অনুপম চৌধুরী

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত মরদেহে পুস্পস্তবক অর্পণ করে রাষ্ট্রের পক্ষে সর্বপ্রথম শ্রদ্ধা জানান যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ আনুষ্ঠানিক স্যালুট জানায় মুক্তিযুদ্ধের এই শীর্ষ কলম সৈনিককে। এসময় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কফিনে জাতীয় পতাকা ও ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন হাই কমিশনার সৈয়দা মুনা তাসনিম, পরে মুক্তি যোদ্ধা গণ শ্রদ্ধা জানান। ব্রিটেনের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ একে একে মরদেহে শ্রদ্ধা জানান। একে একে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, জাসদ, সিপিবি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ শ্রদ্ধা জানান গাফ্ফার চৌধুরীর কফিনে। 

হাই কমিশনার সৈয়দা মুনা তাসনিম

শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জনাব চৌধুরীর মরদেহ হীমঘরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যান ফিউনারেল সার্ভিসের কর্মীরা। ফিউনারেল সার্ভিসের পরিচালক পারভেজ কোরেশী সত্যবাণীকে জানান, মরদেহ বাংলাদেশে প্রেরণের ফ্লাইট সিডিউল এখনও ঠিক হয়নি। আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকায় চলতি সপ্তাহে মরদেহ পাঠানো সম্ভব হচ্ছেনা। আগামী মঙ্গল বা বুধবার হয়তো মরদেহ বহনকারী বিমান বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে লন্ডন ছাড়তে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯ মে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক অসুস্থ্যতায় লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি সাংবাদিক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের মাঝে ছড়িয়ে পরে শোকের ছায়া। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সহ দেশে বিদেশে নানা সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষ শোক জানিয়েছেন ।

আরও সংবাদ

Close