আজকের সিলেট

জকিগঞ্জে ওএমএস’র চাল নিয়ে চালবাজী : আত্মসাত না লুট?

জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজারে ওএমএস’র ৫৭০ বস্তা চাল নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষ বলছে জনতা ট্রাক আটকে লুটপাট করেছে, আবার অন্যপক্ষ বলছে আত্মসাতকালে চালভর্তি ট্রাক আটক করা হয়েছে। আত্মসাতের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চালভর্তি ট্রাকে লুটপাট করা হয়।

এ ঘটনায় জকিগঞ্জ থানা পুলিশ দুজন ডিলার, ট্রাক চালক ও হেলপার এবং চাল লুটপাটে জড়িত দুজনসহ মোট ৬ জনকে আটক করেছে।

জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কালিগঞ্জ বাজারের হোসেন এন্ড সন্সের সামনে ট্রাক থামিয়ে ১০ টাকা দরের ৩০ কেজি ওজনের চালের বস্তা নামানোর সময় স্থানীয় জনতার সন্দেহ হয়। তখন ট্রাক চালককে চাল নামানোর বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে চালক জানায় চালগুলো কালিগঞ্জের দুই ব্যবসায়ীর। তারপর স্থানীয় জনতা ট্রাক চালকের কাছে চালের সরকারি কাগজপত্র দেখতে চাইলে সে কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তখন ট্রাকসহ চাল আটক করে প্রশাসনকে খবর দেন স্থানীয়রা।

আবার অপরপক্ষ বলছে- ভিজিএফ-এর সরকারি ১৭ মেট্রিক টন (৫৭০ বস্তা) চাল উত্তোলনের পর সিলেট থেকে পুস্টি মিক্স করে নিজেদের ইউনিয়নে ১০টাকা দামে বিক্রি করার জন্য আজ রোববার সকালে কালিগঞ্জ বাজারে তাদের নিয়ে আসার জন্য রওয়ানা দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাজারে প্রবেশের পর স্থানীয় কিছু মানুষ ট্রাকের উপর হামলে পড়ে। পরে আরো প্রায় অর্ধশত মানুষ এসে ট্রাকভর্তি চাল লুট করে নিয়ে যায়।

বিষয়টি নিয়ে কালিগঞ্জ খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ওসি এলএসডি আব্দুল করিম জানান- সিলেটের মেঘনা রাইসমিল থেকে পুস্টি মিক্স করে ডিলারের গোডাউনে পৌছে দেয়ার পথেই কিছু লোক এসে চাল লুট করে নিয়ে যায়। এখানে ডিলার দ্বারা চুরি কিংবা আত্মসাতের সুযোগই নেই।

এদিকে ঘটনার খবর পয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ, জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান। এরই মাঝে স্থানীয় জনতা চাল লুটপাট শুরু করে। পরে পুলিশের পদক্ষেপে লুটপাট বন্ধ হয়।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ একটি গোদাম থেকে চাল উদ্ধার অভিযানে থাকাকালে লোকজন চালভর্তি ট্রাকে লুটপাট করে চাল নিয়ে যায়। পরে পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়ে কিছু চাল উদ্ধার করে ও জড়িত দুজনকে আটক করেছে। এছাড়া চাল কারসাজিতে কালিগঞ্জের এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে। তাদের ইঙ্গিতেই স্থানীয় মানুষ সরকারি চালের ট্রাকে লুটপাট করেছে। চাল আত্মসাতের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এ লুটপাট করা হয় বলেও জানান তারা।

জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের জানিয়েছেন, ট্রাকে ৩৪৬ বস্তা চাল পেয়েছেন। এছাড়া ডিলার আব্দুল মুকিতের দোকান থেকেও ২৭ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। চাল পাচারের অভিযোগে খাসেরা গ্রামের মৃত ফয়জুর রহমানের ছেলে ডিলার জয়নাল আহমদ (২৭), আইয়র গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ডিলার আব্দুল মুকিত (৩১), কসকনকপুর গ্রামের আছদ্দর আলীর ছেলে ট্রাক চালক কামরুল ইসলাম (২৭), বারগাত্তা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে সইফ উদ্দিন (৩০) কে ও চাল লুটপাটের ঘটনায় নগরকান্দি গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৯) ও দেওয়ানেরচক গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে বিপ্লব আহমদ (২৮) কে আটক করা হয়েছে।

এ ঘটনায় খাদ্য গোদামের কর্মকর্তা বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ দায়ের করবেন। মামলায় মূলহোতারা কি আইনের আওতায় আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে খাদ্য গোদামের কর্মকর্তা অভিযোগ দায়ের করবেন তাদের বিরুদ্ধেই মামলা রেকর্ড করা হবে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের চাল আটক করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ট্রাকসহ চালগুলো জব্দ করা হয়েছে।

আরও সংবাদ

Close