সারা বাংলা

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ : না কি অন্য কিছু

ইউক্রেন-রাশিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে তর্কে জড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই দল ‘যুদ্ধ বিশেষজ্ঞের’ মারামারিতে পাঁচজন আহত হয়েছেন- এমন একটি তথ্য ও ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে ২৪ ফেব্রুয়ারি। এর তিন দিনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাশিয়া ও ইউক্রেনপন্থিদের সংঘর্ষের তথ্য ছড়াতে শুরু করে। অসংখ্য ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে এই তথ্য ও ছবি ছড়ানো হয়।

তবে বিষয়টি সত্য নয়। এটি ফেসবুকে ছড়ানো একটি গুজব।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবে হলো ‘রাশিয়া-ইউক্রেনপন্থিদের’ সংঘর্ষ
এ ধরনের পোস্ট ছড়িয়েছে ফেসবুকে

 

জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনাটি সত্যি, তবে সংঘর্ষের কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নয়। যে ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, সেটি প্রায় দুই বছর আগের একটি ঘটনার।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর দুদিন পর হিউমারকেন্দ্রিক অনলাইন সাইট eআরকি একটি স্যাটায়ার নিবন্ধ প্রকাশ করে।

‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাশিয়া ও ইউক্রেন সমর্থকদের মাঝে প্রীতি সংঘর্ষের আয়োজন’ শিরোনামের ওই নিবন্ধের শুরুটাই ছিল এমন-

‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই উত্তেজনার বারুদ উষ্কে দিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া। জানা যায়, এই যুদ্ধ নিয়ে গতকাল বিকেলে নিজেদের মধ্যে একটা প্রীতি সংঘর্ষের আয়োজন করেন তারা। শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে দুভাগে ভাগ হয়ে নিজেদের মাঝে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এই সংঘর্ষে এখনো পর্যন্ত কারা জিতেছে সে খবর পাওয়া যায়নি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবে হলো ‘রাশিয়া-ইউক্রেনপন্থিদের’ সংঘর্ষ
eআরকিতে প্রকাশিত স্যাটায়ার নিবন্ধ

ওই স্যাটায়ার নিবন্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে সংঘর্ষের একটি ফাইল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি ফেসবুকের ভাইরাল ছবি থেকে আলাদা।

দেখা গেছে, ২০২০ সালের ২৬ এপ্রিল একুশে টিভির অনলাইন পেজে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে ব্যবহার করা ছবিটিই এখন ফেসবুকে রাশিয়া-ইউক্রেনপন্থিদের ছবি হিসেবে ছড়ানো হচ্ছে।

একুশে টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী সংঘর্ষের ঘটনাটি নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের উদ্ধৃতি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আশুরাইল গ্রামের বাসিন্দা ধলাই মিয়া তার বাড়িতে সীমানাপ্রাচীর দিতে চাইলে প্রতিবেশী ধন মিয়া তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে উভয় পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টা চলা ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।‘

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবে হলো ‘রাশিয়া-ইউক্রেনপন্থিদের’ সংঘর্ষ
একুশে টিভির অনলাইনে ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন

 

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন ফেসবুকে ছড়ানো তথ্যকে গুজব বলে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা বিষয়ে আমি অবগত নই। এটি অপপ্রচার। তদন্তসাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও সংবাদ

আরও দেখুন

Close
Close